অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আর বাড়বে না

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৬ ০৮:০২:৩৭
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আর বাড়বে না

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি রাজধানীতে তারসরকারি বাসভবনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও ইসলামপন্থি সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে সরাসরি দুই পর্বের বৈঠক করেছেন। এই সংলাপে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার।

বৈঠকে ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন—তিনি নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না এবং ২০২৬ সালের জুনের পর এক ঘণ্টাও দায়িত্বে থাকতে চান না। নির্বাচন কবে হবে তা নির্ধারণে প্রশাসনিক কাঠামো প্রস্তুতির অপেক্ষার কথাও জানান তিনি।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অধিকাংশই নির্বাচনকালীন পরিকল্পনার নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না যেমন বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন মতবিনিময় করতে হবে। একইসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে জনগণকে স্বচ্ছ বার্তা দিতে হবে।

অন্যদিকে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট’ ধরে রাখার আহ্বান জানান এবং সংস্কারকে জনগণকেন্দ্রিক করার ওপর জোর দেন।

চরমোনাই পীর (রেজাউল করীম) এবং মামুনুল হকের বক্তব্যে উঠে আসে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, "আপনার পরাজয় মানে আমাদেরও পরাজয়", এবং তাকে মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়ে না যাওয়ার আহ্বান জানান। মামুনুল হক আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার দৃশ্যমান হওয়া উচিত এবং ইসলামবিরোধী সংস্কারের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক।”

গণসংহতির জোনায়েদ সাকি এবং গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর নির্বাচনকাল নির্ধারণ এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবি জানান। তাঁদের মতে, বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক প্রস্তুতির জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ জরুরি। একইসঙ্গে তারা নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সংকট নিরসনের পথ দেখছেন না।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব রয়েছে এবং প্রশাসনে এখনও পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি মনে করেন, শুধু ‘আশ্বাস’ দিয়ে বা দায়িত্ব ছাড়ার হুমকি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না—বরং ‘চূড়ান্ত সমঝোতা’র জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন।

ড. ইউনূসের বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও, নির্বাচন নিয়ে এখনো রয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা, অন্যদিকে প্রশাসনিক প্রস্তুতি—এই দুটি বিষয় এখন নীতিনির্ধারণী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলগুলো রোডম্যাপ, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি চাইছে, আর সরকার চাইছে সময়।

এই সংলাপের মধ্য দিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা উঠে এসেছে:

  • রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর অন্ধ আন্দোলনের পথে নেই; তারা আলাপ-আলোচনায় আগ্রহী।
  • ইসলামপন্থি দলগুলোও এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদের জায়গা চায়।
  • সরকার এখনো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বলে একটি স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস এবং দলগুলোর সরাসরি মতামতের ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলাদেশ একটি অনিশ্চয়তা আর সম্ভাবনার দোলাচলে দাঁড়িয়ে আছে। এখন প্রয়োজন—নির্বাচনকাল নির্ধারণ, নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ। সময়ের পরীক্ষায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরিণত আচরণই হতে পারে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের নিয়ামক।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ