বিএনপির চাপের মুখে কোণঠাসা অন্তর্বর্তী সরকার!

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৩ ০৯:১৯:১৫
বিএনপির চাপের মুখে কোণঠাসা অন্তর্বর্তী সরকার!

বিএনপি টানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলটি ১৪ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত রাজধানীতে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে কাকরাইল মোড়ে টানা ৩১ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিএনপির ভাষ্য মতে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দৃশ্যত চাপ তৈরি করতে পেরেছে তারা, এবং জনগণের সামনে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে।

আদালতের রায় ও কর্মসূচি স্থগিত

গতকাল হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট বৈধ ঘোষণা হওয়ায় ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের আইনি বাধা কেটে যায়। এই রায়ের পরপরই আন্দোলনকারীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। ‘এই মুহূর্তে খবর এল, ইশরাক মেয়র হলো’ এমন স্লোগানে মুখর হয় কাকরাইল মোড়। এরপর ইশরাক হোসেন অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দেন, যদিও তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি বহাল রাখেন।

উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবি

গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি দাবি করে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অপসারণ করতে হবে। দলটির দাবি, এই ব্যক্তিরা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, যার ফলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি উল্লেখ করে, “যেসব উপদেষ্টা একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের উপদেষ্টা পরিষদে রাখা সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করছে। সেক্ষেত্রে তাদের অব্যাহতি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”

নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিতর্কিত ভূমিকা

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বক্তব্যকে ঘিরেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি বলেছে, তার বক্তব্য রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত দেয়, যা সরকারের ভাবমূর্তিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। খলিলুর রহমান বর্তমানে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন রোডম্যাপের দাবি ও চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি

বিএনপির পক্ষ থেকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয় এবং অবিলম্বে একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা প্রকাশ করছে, যা সরকারকে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে।”

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা

বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, পবিত্র ঈদুল আজহার পর রাজপথে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইশরাক হোসেন বলেন, “আমরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত রেখেছি, তবে সরকারের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্দেশনা আসবে। উপদেষ্টাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আন্দোলন-সংঘাত এবং সরকারের প্রতি চাপের রাজনীতি আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে যদি সরকার দ্রুত সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও উপদেষ্টা পরিষদের গঠন নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান না নেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষা করা এখন সময়ের অন্যতম প্রধান দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ