বান্দরবানে মারাইংতং জাদীতে বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর: উত্তপ্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২২ ১৭:৫৮:২৩
বান্দরবানে মারাইংতং জাদীতে বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর: উত্তপ্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়

সত্য নিউজ:বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ঐতিহাসিক মারাইংতং বৌদ্ধ জাদীপাহাড়ে নির্মাণাধীন একটি বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিকভাবে এটি জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মারাইংতং জাদীর ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাদী পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সাঙ্গু মৌজার চংপাত ম্রো হেডম্যান গ্রুপের বিরোধ চলে আসছে। বুধবার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন জাদীপাহাড়ে উপস্থিত হয়ে জমি নিয়ে আলোচনায় বসেন। বৈঠক শেষে তারা চলে গেলে জাদীর সেবকরা নির্মাণাধীন বুদ্ধমূর্তিটির হাত, পা ও অন্যান্য অংশ ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।

ঘটনার পরপরই জাদীর সভাপতি উ উইচারা মহাথেরো ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যার ফলে জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জাদী পরিচালনা কমিটির সভাপতি উ উইচারা মহাথেরো স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, “এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং এর পেছনে সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো রয়েছেন।”

অন্যদিকে, হেডম্যান চংপাত ম্রো এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, “আমি নিজেও একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আমার দ্বারা এমন কাজ কখনোই সম্ভব নয়।” তিনি আরও দাবি করেন, এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। চংপাত ম্রো জানান, জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রোসহ অন্যান্যদের সঙ্গে তিনি বুধবার মারাইংতং এলাকায় সরেজমিনে জমি পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন এবং পরে গজালিয়া হেডম্যানের বাড়িতে বসে জমি নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানেই তিনি প্রথম বুদ্ধমূর্তি ভাঙার খবর পান।

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মারাইংতং জাদীপাহাড় স্থানীয়ভাবে একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গত কয়েক মাস ধরে এখানে একটি বিশাল বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের কাজ চলছিল, যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক নিদর্শন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।

এই নির্মাণকাজকে কেন্দ্র করেই জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সাঙ্গু মৌজার ম্রো সম্প্রদায় এই ভূমিকে তাদের ঐতিহ্যবাহী জমি দাবি করছে, যা জাদী পরিচালনা কমিটি অস্বীকার করে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ