নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শ্রমিক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে বসুরহাট জিরো পয়েন্ট এবং মুছাপুরের বাংলাবাজার সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হন। পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন শ্রমিক নেতা ওয়াসিম, মোহাম্মদ মিয়া, ধনা মিয়া ও এমদাদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন। অভিযোগে জানা যায়, নোয়াখালী জেলা বেবি টেক্সি, অটো টেম্পু, অটোরিক্সা চালক ও সহকারী ইউনিয়ন (রেজিঃ নং-চট্ট-২০৪২) নামের সংগঠনের কয়েকজন নেতা দীর্ঘদিন ধরে ‘জিপি’র নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, মাসুদুর রহমান, বেলাল হোসেন ও শিপন নামের তিনজন নেতা বহু বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছেন। সংগঠনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছিল। তবে ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর জয়নাল আবদীন, আবুল মোবারক বাহার, বেলাল হোসেন ও ফেরদৌস আম্মেদ সেলিমের নেতৃত্বে সংগঠনের কার্যালয় দখল করে নেওয়া হয়।
দখলদাররা বর্তমানে উপজেলার ৩-৪ হাজার সিএনজি থেকে প্রতিদিন ২৫ টাকা করে আদায় করছেন, যা থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অবৈধ চাঁদা আদায়ের কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শ্রমিকরা। সোমবার সকালে একদল সিএনজি চালক বসুরহাট জিরো পয়েন্টে এসে জিপির নামে টাকা আদায় বন্ধ করে দেয়। এর পরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়, যা দ্রুত বাংলাবাজার সিএনজি স্ট্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আরও দুজন শ্রমিক আহত হন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও সেখানে উপস্থিত থেকে শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভূমিকা রাখেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বসুরহাট শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করা হবে। আশ্বাস পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শান্ত হন।
এর আগে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মো. রিপন নামের একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনা ক্যাম্প ও থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিজেরাই চাঁদা আদায় বন্ধের চেষ্টা করেন এবং পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা আবুল বাসার ও শ্রমিক মো. রিপন অভিযোগ করেন, পূর্বেকার কমিটিও অবৈধ ছিল এবং তারাও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বর্তমান দখলদার কমিটি একইভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কিন্তু কোনো হিসাব দিচ্ছে না। এমনকি মৃত শ্রমিকদের পরিবারকেও নির্ধারিত টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে শ্রমিকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে, দখলদার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জয়নাল আবদীন দাবি করেন, তাদের কমিটি বৈধ এবং জিপি নেওয়াও বৈধ। তিনি কোনো ধরনের চাঁদাবাজি বা সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) বিমল কর্মকার জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে তিনি নিজে পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। বসুরহাট পৌরসভার জামায়াতের আমীর মাওলানা মোশাররফ হোসাইনও সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। তিনি আরও জানান, বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।