নিম্ন-আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের চালু করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ঝিনাইদহে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৫ টাকা কেজি দরে কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছানোর কথা থাকলেও, কিছু অসাধু ডিলারের যোগসাজশে এসব চাল স্থানীয় চালকল মালিকদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে যেসব ডিলাররা অনিয়ম করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঝিনাইদহের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধিকাংশ ডিলার আত্মগোপনে চলে যান। পরে জেলা প্রশাসক জেলার ৬টি পৌরসভাসহ মোট ৬৭টি ইউনিয়নে নতুন ডিলার নিয়োগ দেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, নতুন ডিলারদের মাধ্যমেও অনিয়ম অব্যাহত আছে। ভোররাত থেকেই শ্রমজীবী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও দিনমজুরসহ নিম্ন-আয়ের মানুষ ডিলারদের দোকানে দাঁড়িয়ে চাল কিনতে আসেন। কিন্তু তারা খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন, কারণ দোকান খোলার আগেই তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল 'গায়েব' হয়ে যাচ্ছে।
শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলাররা রাতের আঁধারে ১৫ টাকা দরের চাল ৩০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় চালকল মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সম্প্রতি সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়ন পরিষদের ডিলার সাকিব আহমদ এক পিকআপ চাল হাটগোপালপুর এলাকার 'শুভ প্রগতি অ্যাগ্রো ফুড' নামের এক চালকল মালিকের কাছে বিক্রি করার ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা খাদ্য বিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ডিলারদের চাল বিক্রি করার কথা। কিন্তু কিছু অসাধু ট্যাগ অফিসারের সঙ্গে ডিলাররা যোগসাজশ করে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত চাল চালকল মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন, যা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
নারিকেলবাড়িয়া এলাকার ভ্যানচালক সোবাহান বিশ্বাস অভিযোগ করেন, "আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি। তবে ডিলাররা আমাদের বরাদ্দকৃত চালের চেয়ে কম পরিমাণ নিতে বলেন। আবার অনেক সময় বলেন, চাল শেষ হয়ে গেছে। পরে গিয়ে দেখি ওই চাল বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।"
মানবাধিকারকর্মী চন্দন বসু এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "আগের সরকারের সময়েও গরিবের চাল নিয়ে নয়ছয় করতে দেখেছি। এখনো সে ঘটনাই ঘটছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন।"
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য এই ঘটনাকে 'তুচ্ছ' বলে মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরি বলেন, "সম্প্রতি কয়েকটি ডিলারের বিষয়ে আমরা এ ধরনের তথ্য পেয়েছি। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের একাধিক টিম কাজ করছে।" তিনি আরও নিশ্চিত করেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে যেসব ডিলার অনিয়ম করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।