সাগরে রোহিঙ্গা ফেলা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে ভারত, তদন্তে নামল জাতিসংঘ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২০ ২০:০২:২৬
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে ভারত, তদন্তে নামল জাতিসংঘ

ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে বলা হচ্ছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আন্দামান সাগরের মাঝখানে ফেলে দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের নিয়ে গঠিত এই শরণার্থী দলকে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ঘটনার বিবরণ: নির্মম বাস্তবতা

এই ঘটনার সূত্রপাত ৬ মে, ২০২৫ তারিখে। দিল্লি থেকে ৪১ জন রোহিঙ্গা, যাদের মধ্যে ১৫ জন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীও ছিলেন, তাদের আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। পরে ৮ মে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি জাহাজে করে তাদের আন্দামান সাগরে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রের মাঝপথে নামিয়ে দেয়। ৯ মে রাতে এক তরুণ রোহিঙ্গা তার মিয়ানমারফেরত বাবা-মায়ের কাছ থেকে ফোনে জানতে পারেন, কীভাবে তাদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় এবং তারা কষ্ট করে সাঁতরে তীরে পৌঁছান।

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বার্তা সংস্থা এপিকে নিশ্চিত করেন, তাদের স্বজনরা বর্তমানে মিয়ানমারে ফিরে গিয়েছেন, কিন্তু তাদের অবস্থান এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া: আন্তর্জাতিক তদন্তের উদ্যোগ

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার দপ্তর ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এই ঘটনাকে "অবিবেচনাপ্রসূত ও মানবিকতার পরিপন্থী" হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং বিষয়টি তদন্তে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রিউজ এই ঘটনাকে “আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে এমন শরণার্থীদের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা” বলে বর্ণনা করেন।

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনাটি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়তে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ এর সরাসরি লঙ্ঘন।”এই নীতিমালার অধীনে কোনো শরণার্থীকে এমন জায়গায় ফেরত পাঠানো যায় না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ভারতের নীরবতা এবং বিতর্কিত বিচারিক অবস্থান

এই ঘটনায় ভারতীয় নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান। আদালত এ বিষয়ে দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি না করে মন্তব্য করেছে, “এই ঘটনাটি চমৎকারভাবে রচিত একটি গল্প মাত্র।”

ভারতের বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ জীবনের অধিকার নিশ্চিত করে, যা নাগরিক ও অনাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথচ আজ আদালত এমন ভাষা ব্যবহার করছে, যা একটি অমানবিক প্রশাসনের প্রতিচ্ছবি।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত বলছে, ‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’, অথচ এখন সেই ভারতের আদালতই বলছে, রোহিঙ্গারা কোনো অধিকার রাখে না এবং তাদের ইচ্ছেমতো সমুদ্রে ফেলে দেওয়া যেতে পারে।”

ভারতের শরণার্থী নীতি নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের জাতীয় পর্যায়ে কোনো শরণার্থী আইন নেই, এবং দেশটি জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের সদস্য নয়। এতদিন ভারত সরকার মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে উঠেছে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে এবং ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ এবং ভবিষ্যত পরিণতি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংগঠন ভারতের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এই পদক্ষেপ শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে না, বরং শরণার্থীদের প্রতি মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার বিরুদ্ধেও যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে ভারত একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য নেতিবাচক উদাহরণ হতে পারে। একই সঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী সুরক্ষার আন্তর্জাতিক কাঠামো ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও এটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত