ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা: সরকার কি ভাবছে?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২০ ০৬:৩৩:০৪
ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা: সরকার কি ভাবছে?

সত্য নিউজ: ভারত হঠাৎ করে স্থলপথে বাংলাদেশি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। শনিবার (১৭ মে) এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর বিষয়টিকে অ-শুল্ক বাধা (Non-Tariff Barrier) হিসেবে দেখছে ঢাকা, তবে পাল্টা ব্যবস্থা না নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাচ্ছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক কিছু অ-শুল্ক সীমাবদ্ধতা পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এপ্রিল মাসে ভারত তাদের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্যের তৃতীয় দেশে রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর জবাবে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি সীমিত করে। পরবর্তীতে ভারত এ সিদ্ধান্ত নেয়—যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও ঘনীভূত করেছে।

সরকারের অবস্থান: সংযত প্রতিক্রিয়া, কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা

বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “ভারতের পদক্ষেপটি একতরফাভাবে এসেছে। এখন আমাদের করণীয় নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা চলছে। তবে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নয়, আমরা আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই।” তিনি বলেন, “একটি দেশের প্রতিক্রিয়ার জবাবে আরেকটি দেশের প্রতিক্রিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে শত্রুতার জন্ম দেয়। আমরা চাই উভয় দেশই পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিক।”

এই সংকট মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (২০ মে) একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় জরুরি সভা ডেকেছে। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আয়েশা আক্তার জানিয়েছেন, “এই বৈঠকের মাধ্যমে রপ্তানির চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে বাস্তবভিত্তিক ও সুপরিকল্পিত করণীয় নির্ধারণ করা হবে।”

বিশ্লেষকদের মত: পাল্টা ব্যবস্থা নয়, দরকার কৌশলী কূটনীতি

অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি তাৎক্ষণিক আবেগনির্ভর প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, “আমরা ‘পাল্টা-পাল্টি’ ধারায় যাচ্ছি — এটা আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। আমাদের বাজার সক্ষমতা এখনও সীমিত। নিজেদের ক্ষতি করে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই ঠান্ডা মাথায় কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে।”

সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মন্তব্য করেন, “এ ধরনের অ-শুল্ক প্রতিবন্ধকতা শুধু রপ্তানিকারকদের ক্ষতিই করে না, দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সমাধানের প্রথম ধাপ হলো এই নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা। এরপর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক ও দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।”

সার্বিক প্রেক্ষাপট: স্পর্শকাতর সময়, প্রয়োজন সুসমন্বিত কূটনৈতিক তৎপরতা

ভারতের নিষেধাজ্ঞাকে দেশটির বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ‘রেসিপ্রোকাল মুভ’ বা পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে, তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও স্পর্শকাতর করে তুলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে হলে উভয় পক্ষকেই উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও পারস্পরিক সম্মাননির্ভর আলোচনার পথে অগ্রসর হতে হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ