শান্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-পাকিস্তানকে উদ্যোগের আহ্বান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৯ ১২:৫৬:২২
শান্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-পাকিস্তানকে উদ্যোগের আহ্বান

সত্য নিউজ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনা ও সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দুই দেশকে ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পরস্পরের প্রতি আস্থা সংকটে যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এমন আহ্বানকে কূটনৈতিক মহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উভয় দেশ—ভারত ও পাকিস্তান—কে দায়িত্বশীল আচরণ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।”

সংযম ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র জানান, বর্তমান সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গেই সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের প্রতিফলন, যারা বিশ্বাস করে যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপের পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো কঠোর বিবৃতি না দেওয়ায় কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এটিকে ওয়াশিংটনের কৌশলগত ভারসাম্য নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তবে বর্তমান বিবৃতিতে আবারও সংযম এবং আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান উঠে এসেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পুনরাবৃত্তি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে এবং দুই দেশই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হবে।” তার এই মন্তব্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতি এবং আগের সময়ে সংঘাতকালীন অবস্থানে গৃহীত কূটনৈতিক বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি।

রুবিওর এই বিবৃতি কেবল শান্তির বার্তা নয়, বরং একটি সতর্কতাও যে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে সক্রিয় দৃষ্টি রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এবং পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক অবস্থান

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কিছুটা শীতল সম্পর্ক কূটনৈতিক ভারসাম্যে একটি প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব প্রতিরোধে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে বর্তমান বিবৃতিতে ‘দুই পক্ষের’ প্রতি সমানভাবে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আবারও তার ঐতিহাসিক মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার দিকে ফিরে আসছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পরিণতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা দ্রুততর সময়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘাত বাড়লে তা কেবল সীমান্ত নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্ক বার্তা সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তির বার্তা শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, মানবিক ও কৌশলগত কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা এবং অনির্বাচিত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন আহ্বান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

এখন সময় বলবে, দুটি দেশ এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয়—সহিংসতার পথে না-গিয়ে সংলাপ ও শান্তির পথ বেছে নেয় কি না। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি কূটনৈতিক সিগন্যালের দিকে নিবদ্ধ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ