রোহিঙ্গা ঢলে সীমান্তে ফের শঙ্কা!

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৯ ০৮:৩৪:৫৮
রোহিঙ্গা ঢলে সীমান্তে ফের শঙ্কা!

সত্য নিউজ: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির দমন-পীড়নের মুখে আবারও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন ঢল শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। গত ১৩ মাসে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। বর্তমানে সীমান্তে আরও হাজারো রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।

নির্যাতন, অনাহার ও নিরাপত্তাহীনতা

মংডু শহর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা করিম উল্লাহ জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির দখলের পর তাদের প্রতিদিনকার জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। ঘন ঘন বাড়িতে অভিযান, মারধর, অর্থ আদায়, চিকিৎসা সংকট এবং খাদ্য অভাবের কারণে পরিবারসহ তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

একইভাবে, পালংখালিতে আশ্রয় নেওয়া রহিম উল্লাহ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলেও আরাকান আর্মিকে ‘চাঁদা’ দিতে হয়। ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ, খাদ্য সংকট ও দমনমূলক নির্যাতনে এলাকার শত শত রোহিঙ্গা পাহাড় ও সীমান্তে অবস্থান করছে।

আরেক শরণার্থী হোসনে আরা জানান, তার এক সন্তানকে আরাকান আর্মি গুলি করে হত্যা করেছে। বাকি সন্তানদের নিয়ে কোনোমতে তিনি টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পে পৌঁছেছেন।

ক্যাম্পে চাপ ও নিরাপত্তা হুমকি

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ। পালংখালি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আগে থেকেই ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভার বইতে হচ্ছে। নতুন করে আরও অনুপ্রবেশ ঘটলে আমরা থাকবো কোথায়?” তিনি আরও জানান, ক্যাম্পে আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।

হ্নীলা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, “নতুন অনুপ্রবেশের ফলে ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড ডাকাতি, অপহরণ বাড়ছে। স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”

সীমান্তে সতর্ক নজরদারি

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, নভেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তবে নতুন করে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

সীমান্তে কোস্ট গার্ড ও বিজিবির বাড়তি টহল দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. সিরাজ আমিন জানান, ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় ভালো থাকলেও নতুন শরণার্থীরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

সংকটের গভীরতা

রাখাইনে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সহিংসতা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় জটিলতার মুখে, আবার নতুন করে এই চাপ কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, বলছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এই শরণার্থী স্রোত শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ