ভারতের চরম ব্যর্থতা: মহাকাশেই ধ্বংস রকেট!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১৩:১৮:১৬
ভারতের চরম ব্যর্থতা: মহাকাশেই ধ্বংস রকেট!

সত্য নিউজ: ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) তাদের ১০১তম স্যাটেলাইট মিশনে এক গুরুতর ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে, যা দেশের মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাসে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি-সি৬১ (PSLV-C61) রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল রোববার (১৮ মে) সকাল ৫টা ৫৯ মিনিটে। কিন্তু উৎক্ষেপণের মাত্র ২০৩ সেকেন্ড পর, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের মাথায় তৃতীয় ধাপে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিশনটি বাতিল ঘোষণা করে রকেটটিকে মহাকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

রকেটটি ইওএস-০৯ (EOS-09) নামের একটি উপগ্রহ বহন করছিল, যার ওজন ছিল প্রায় ১,৬৯৬ কেজি। উপগ্রহটিকে ৫২৪ কিলোমিটার উচ্চতায় একটি সান-সিঙ্ক্রোনাস পোলার অরবিটে স্থাপন করার কথা ছিল, যা পৃথিবীর নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত। এটি মূলত ভূ-পৃষ্ঠের পর্যবেক্ষণ এবং কৃষি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের মানচিত্র তৈরির জন্য ব্যবহারযোগ্য একটি উন্নত প্রযুক্তির উপগ্রহ ছিল।

উৎক্ষেপণের ধাপ ও ব্যর্থতা

ইসরোর মুখ্য পরিচালক ভি নারায়ণান জানান, উৎক্ষেপণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত রকেটের পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতভাবে ঠিকঠাক চলছিল। পিএসএলভি-সি৬১-এর প্রথম ধাপে সলিড বুস্টার ব্যবহার করা হয়, যা রকেটকে প্রাথমিক গতি দেয়। দ্বিতীয় ধাপে থাকে তরল জ্বালানিচালিত ইঞ্জিন, যা কক্ষপথে পৌঁছানোর দিকে রকেটকে পরিচালিত করে। তৃতীয় ধাপের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় একটি আরও উন্নত সলিড প্রপালশন মোটর, যা মূলত উপগ্রহকে নির্ধারিত কক্ষপথে স্থাপন করে। কিন্তু তৃতীয় ধাপে পৌঁছানোর পরই মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে সংকেত আসে যে, ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক কার্যক্রম ঘটছে। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রকেটটির নিয়ন্ত্রণকারী দল মিশনটি নিরাপদভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

নিরাপত্তার জন্য রকেট ধ্বংস

মিশন বাতিলের পরপরই ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে এক বিশেষ কমান্ড পাঠিয়ে রকেটটিকে মহাকাশেই আত্মধ্বংস করানো হয়। ইসরো জানায়, এই প্রক্রিয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিবেচিত ছিল এবং এতে পৃথিবীর উপরভাগে কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর তা যেন কোনো মানববসতি বা পরিবেশের ওপর প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইসরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যা এই ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করবে। এই কমিটি বিশেষভাবে তৃতীয় ধাপে ব্যবহৃত মোটরের গঠন, উপকরণ ও তার কমান্ডিং সিস্টেম বিশ্লেষণ করবে। এর ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ত্রুটি এড়ানো এবং রকেট প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার পথ সুগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরো আরও জানিয়েছে, তারা এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ উৎক্ষেপণগুলিকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলার জন্য প্রযুক্তিগত ও প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব মিশনে ভারী উপগ্রহ পাঠানো হবে কিংবা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব থাকবে, সেগুলোর জন্য পুনঃমূল্যায়ন চালানো হবে।

রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ভারতের এই ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা মহলে বিস্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ ইসরো সম্প্রতি চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণ ও গগনযান নামক মানব মহাকাশ মিশনের প্রস্তুতি দিয়ে নিজেদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রমাণ করেছিল। এই ব্যর্থতা হয়তো সেই ধারাবাহিকতায় সাময়িক ছন্দপতন ঘটাবে, কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে ইসরোর রকেট প্রযুক্তিকে আরও শক্তিশালী করার দিকেই চালিত করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাকাশ গবেষণায় ব্যর্থতা নতুন নয়, বরং এটি প্রযুক্তির পরিপক্বতা ও নির্ভরযোগ্যতা অর্জনের একটি অনিবার্য ধাপ। এমনকি নাসা, ইএসএ এবং রোসকসমসের মতো সংস্থাগুলোরও বহু উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সেই ব্যর্থতা থেকে তারা শিখেছে এবং ভবিষ্যতের অভিযানে সফল হয়েছে।

ইসরোর ১০১তম মিশনের ব্যর্থতা ভারতের মহাকাশ অভিযানে একটি বড় ধাক্কা হলেও, এটি ভবিষ্যৎ উৎক্ষেপণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। নির্ভরযোগ্যতা, নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা, এই তিনটি ক্ষেত্রেই ইসরোকে আরও জোরদারভাবে এগোতে হবে। ভারতের মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল মহাকাশ শক্তির জন্য এই ব্যর্থতা হয়তো একটি বাধা, কিন্তু এটি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও। সবমিলিয়ে, ইসরোর জন্য এটি একটি সংক্ষিপ্ত বিপর্যয় হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি হয়ে উঠতে পারে এক মূল্যবান প্রযুক্তিগত মোড়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ