উদ্যোক্তা সৃষ্টির আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বলেছেন, দেশের আর্থিক কাঠামো এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পায়—শুধু চাকরির প্রত্যাশী হয়ে না থাকে।
রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) নতুন ভবন ‘ভবন-২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মানুষ চাকরি করার জন্য জন্মায়নি, মানুষ জন্মায় উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। তাই আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেখানে প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পাবে।”
ড. ইউনূস বলেন, আজকের প্রজন্ম বিশেষ করে গ্রামের তরুণ-তরুণীরা অনেক বেশি সচেতন, তথ্যসমৃদ্ধ ও কল্পনাশীল। তাই এমন আর্থিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে তারা নিজেদের উদ্যোগ শুরু করতে পারে—ব্যক্তিগতভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি এমন কাঠামো তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ ইচ্ছা করলে নিজের উদ্যোগ শুরু করতে পারে, এমনকি বিনিয়োগকারী হিসেবেও যুক্ত হতে পারে, তবে পরিবর্তন সম্ভব।”
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বাস করেন, এমন পরিবেশে প্রত্যেকে চাইলে সংগঠিতভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবে। তারা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ শুরু করতে পারে, বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারে এবং নিজেদের এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা এগিয়ে যেতে চাই। পরীক্ষামূলকভাবে দেখতে চাই কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। ইতোমধ্যেই লাখো উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে মেয়ে-ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করে কাজ করছে। এ অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এ ধারা আরও প্রসারিত করা সম্ভব।”
-সুত্রঃ বি এস এস
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে ড. ইউনূসের শোক
বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে গভীর শোক নেমে এসেছে একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া দশটার দিকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন।
ফরিদা পারভীনের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন,
“নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানসহ বিভিন্ন ধারায় তিনি কণ্ঠের স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে সর্বাধিক পরিচিতি তিনি পেয়েছেন ‘লালনকন্যা’ হিসেবে। তাঁর কণ্ঠে লালন সাঁইয়ের গান বিগত পাঁচ দশক ধরে মানুষের অন্তরে সাড়া জাগিয়েছে এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে।”
শোকবার্তায় ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ফরিদা পারভীন কখনো সংগীতচর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। সংগীতের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও নিবেদন কেবল একজন শিল্পী হিসেবেই নয়, একজন সাংস্কৃতিক যোদ্ধা হিসেবেও তাঁকে অমর করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
বাংলাদেশের সংগীত জগতে ফরিদা পারভীনের অবদান অনন্য। তিনি শুধু লালন সংগীতের ধারক ও বাহকই ছিলেন না, বরং তা জনপ্রিয় করে তোলার মাধ্যমে আধুনিক শ্রোতাদের মধ্যে লোকসংগীতের নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য ও অনুভবজাত পরিবেশনা লালনের দর্শনকে কেবল গ্রামবাংলা নয়, শহুরে প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দেয়।
‘লালনকন্যা’ খ্যাত ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে পরিবেশিত “আমি কুলহারা কলঙ্কিনী”, “তোরা সবাই কইতে পারিস”, “মন রে ক্রমে শুদ্ধ কর”সহ অসংখ্য লালনগীতি শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এবং আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা ফরিদা পারভীনের ব্যক্তিগত সংগ্রামের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জীবনের নানা প্রতিকূলতায়ও গান থেকে দূরে যাননি এই শিল্পী। সংগীতের প্রতি তাঁর অবিচল অনুরাগ শুধু শিল্পচর্চার ক্ষেত্রেই নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের সংগীত জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁর সৃজনশীলতা ও চিন্তাভাবনা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খোরাক যোগাবে।” তিনি মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
-রফিক
কিংবদন্তি ফরিদা পারভীনের শেষনিঃশ্বাস: শোকস্তব্ধ সংগীতাঙ্গন
দেশবরেণ্য লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগে তিনি শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বড় ছেলে ইমাম নিমেরি উপল গণমাধ্যমকে মায়ের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করে জানান, “আম্মা রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানানো হবে।” ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তীও তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কিডনির রোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছিল তাঁর। কিন্তু গত ৫ জুলাই ডায়ালাইসিস চলাকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি।
ফরিদা পারভীনের সঙ্গীতযাত্রা শুরু হয় ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি জাতীয়ভাবে পরিচিতি পান। তবে তাঁর প্রকৃত পরিচয় লালনসংগীতশিল্পী হিসেবে। এই ধারার গানকে তিনি বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
এরপর একে একে অর্জন করেছেন বহু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে তিনি ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান। চলচ্চিত্রে গাওয়া গানের জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ফরিদা পারভীনকে বলা হয় ‘লালনসংগীতের রাণী’। তাঁর কণ্ঠের মায়াবী ছোঁয়ায় লালনের দর্শন ও সঙ্গীত পৌঁছে গিয়েছিল ঘরে ঘরে, শহর থেকে গ্রাম, এমনকি আন্তর্জাতিক পরিসরেও। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে অর্থ পাচারের অভিযোগে নতুন করে আলোড়ন
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি প্রকাশিত ডকুমেন্টারি “Bangladesh’s Missing Billions, Stolen in Plain Sight”-এ দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, বাণিজ্যে অতিরিক্ত বা কম ইনভয়েস তৈরি, হুন্ডি-হাওলা প্রক্রিয়া এবং যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি ক্রয়সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।
ডকুমেন্টারির শুরুতেই শেখ হাসিনার নাটকীয় ক্ষমতাচ্যুতির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। এতে ছাত্রনেত্রী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, রেজওয়ান আহমেদ রিফাদ, এফটির দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধান জন রিড, কমোডিটি সংবাদদাতা সুসানাহ সাভেজ, স্পটলাইট অন করাপশন–এর ডেপুটি ডিরেক্টর হেলেন টেইলরসহ একাধিক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ডকুমেন্টারিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, লন্ডন বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশাল আর্থিক খাত ও আকর্ষণীয় সম্পত্তি বাজার এ পাচারের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে, অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত চলছে। এছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমকেও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে নাম উল্লেখ করা হয়।
জন রিড ডকুমেন্টারিতে জানান, ব্যাংক পরিচালকরা কখনো কখনো অস্ত্রের মুখে শেয়ার হস্তান্তরে বাধ্য হয়েছেন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে চিনি যারা ‘হল অব মিররস’ নামে কুখ্যাত একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন।”
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদক সুসানাহ সাভেজ মন্তব্য করেন, “এ ধরনের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় লুটপাটকে আমরা দূরের সমস্যা ভাবতে পারি, কিন্তু আসলে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং যুক্তরাজ্যও এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।”
অর্থ ফেরত আনা যে অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া, তাও ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ উদ্ধারের টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ইফতি ইসলাম এটিকে ইতিহাসের অন্যতম জটিল প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ডকুমেন্টারিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “সব টাকা ফেরত আনা সম্ভব নাও হতে পারে, কিন্তু আমরা যা পারি তার প্রমাণ খুঁজে বের করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফেরত আনার চেষ্টা করব। এটি সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থপাচারের ঘটনা।”
তবে প্রশ্ন থেকে গেছে—যেসব ব্যবসায়ী ও গোষ্ঠী এই অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে, তারা ভবিষ্যত সরকারেও প্রভাব খাটাতে পারবে কিনা। জন রিড সতর্ক করে বলেন, “বাংলাদেশের বিপ্লব একটি টার্নিং পয়েন্ট হলেও দেশ আবারও একক রাজনৈতিক আধিপত্যের দিকে ফিরতে পারে।”
ডকুমেন্টারির শেষে রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো, আমরা হয়তো আমাদের শহিদদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব না।”
-হাসানুজ্জামান
নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে অভিনন্দন জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেপালের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শনিবার এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি নেপালের জনগণ ও সরকারের উদ্দেশে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানান।
ড. ইউনূস বার্তায় বলেন,
“বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই সংকটময় ও চ্যালেঞ্জিং সময়ে আপনার দায়িত্ব গ্রহণ নেপালের জনগণের আপনার প্রতি আস্থার প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, নেপাল বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশ।
“আপনার দক্ষ নেতৃত্বে নেপাল শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী।”
ড. ইউনূস সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন,
“নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শোক ও সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
বার্তার শেষে প্রধান উপদেষ্টা নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও সফলতা এবং নেপালের জনগণের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থায়ী উন্নয়ন কামনা করেন।
-সুত্রঃ বি এস এস
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কঠিন অঙ্কে ভারত
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারত এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে অতীতে ভারতের সম্পর্ক মধুর না থাকলেও এখন ভারতের সামনে রয়েছে এক কঠিন সমীকরণ। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক শীতল, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে ভারত কাকে সমর্থন দেবে, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
অতীতের সম্পর্ক ও বর্তমান অবস্থান
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার চললেও তাদের সঙ্গে ভারতের খুব বেশি আলোচনা হয়নি। বরং, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্কই সামনে এসেছে। অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো ছিল না।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২০ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশে দ্রুত একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন হোক। ‘ইনক্লুসিভ’ শব্দটি দিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা চায় আওয়ামী লীগও নির্বাচনে লড়তে পারুক, যদিও বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
কারা ভারতের পছন্দের তালিকায়?
ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে ভারত বিএনপিকেই ক্ষমতায় দেখতে চাইবে। কারণ, জামায়াত ও এনসিপি-কে নিয়ে ভারত খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী নয়। তার মতে, ভারত নিজের স্বার্থেই চাইবে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার আসুক।
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরীও মনে করেন, ভারত কোনো অস্থির সরকার দেখতে চাইবে না। তিনি বলেন, ভারত মনে করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রশাসন ভারতবিরোধী কথা বলেছেন, যার কারণে তাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়।
অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা জহর সরকার মনে করেন, ভারত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। তিনি বলেন, বর্তমান দলগুলোর মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে পুরোনো দল। তিনি আরও মনে করেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে ভারত-বিরোধী জামায়াতের উত্থান ঠেকানো যাবে। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ যাদের ক্ষমতায় আনবে, ভারত তাদের সঙ্গেই কথা বলতে বাধ্য।
জটিলতা ও ভবিষ্যতের ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। এনসিপি একটি নতুন দল, যার সঙ্গে ভারতের কোনো যোগাযোগই তৈরি হয়নি। তবে জামায়াত সমর্থিত ছাত্রশিবির যেভাবে ডাকসু নির্বাচনে জিতেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে তারা এবার ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
জহর সরকার বলেন, শেষের দিকে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ও দুর্নীতি জেনেও ভারত তাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। এটা ঠিক নীতি নয়। তবে শেখ হাসিনা সবসময় ভারতের পাশে ছিলেন, তাই তাকে ত্যাগ করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে ভারতের সামনে এখন এক জটিল রাজনৈতিক সমীকরণ। এই অঙ্কে জড়িয়ে আছে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, জামায়াত, ইউনূস, এনসিপি এবং নিজেদের স্বার্থের বিষয়টি।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে সংকট
‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৭ দফার ভিত্তিতে তৈরি চূড়ান্ত খসড়াটি গত বৃহস্পতিবার রাতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য প্রতিটি দলকে দুজন করে নেতার নাম আজ শনিবারের মধ্যে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। তবে সনদ ঘোষণা করার চেয়ে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েই সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সংবিধান সম্পর্কিত বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও জটিলতা রয়ে গেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় সব মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে। এই সংকট নিরসনে কমিশন আগামী রোববার দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনা করবে।
ভিন্নমত ও বাস্তবায়নের বিকল্প পদ্ধতি
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তিন ধরনের পদ্ধতির কথা বলছে।
বিএনপি: সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। তাদের মতে, সাংবিধানিক আদেশ জারি বা গণভোটের মতো প্রস্তাবগুলো অগ্রহণযোগ্য। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এখন সনদ কার্যকর হলে দেশে দুটি সংবিধান চলমান থাকবে, যা আইনগতভাবে টেকসই নয়।”
জামায়াত ও এনসিপি: জামায়াত ইসলামী ও এনসিপিসহ কিছু দল চায় আগামী নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হোক। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সংস্কার আগামী সংসদের হাতে ছেড়ে দিলে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি অবিচার করা হবে।” এনসিপি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সনদের বাস্তবায়ন চায়।
অন্যান্য দল: বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেকসই ও আইনসম্মতভাবে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত, যা সংসদ বা অধ্যাদেশ দ্বারা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া গণভোট বা গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে এই সনদের বাস্তবায়ন চান।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া
সনদের চূড়ান্ত খসড়ার পটভূমি এবং অঙ্গীকারনামায় বেশকিছু নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। এতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তর সালের নির্বাচনসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ রয়েছে। তবে সনদ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতার সুপারিশ চূড়ান্ত খসড়ায় নেই।
ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করে সরকারকে সুপারিশ করা হবে। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে, কোন পদ্ধতিতে সনদ বাস্তবায়ন হবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক মাইলফলক, যদি এটিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সুবিধাবাদী সমঝোতার বাইরে নিয়ে গিয়ে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ করা যায়।
লন্ডনে মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি সেমিনার থেকে বের হওয়ার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। এ ঘটনা ঘটে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে, কেন্দ্রীয় লন্ডনের ব্লুমসবারি এলাকায় অবস্থিত সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন (দ্য স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ক্যাম্পাসের পেছনের সড়কে।
বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ওই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল মাহফুজ আলমেরও। অনুষ্ঠান শেষে হাইকমিশনের একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়ি ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা সেটির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন। একই সঙ্গে কয়েকজন গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। তবে দ্রুত পুলিশ হস্তক্ষেপ করায় তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
লন্ডন হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলাকারীরা মনে করেছিলেন গাড়ির ভেতরে মাহফুজ আলম অবস্থান করছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্য একটি গাড়িতে ভিন্ন রাস্তায় করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, “স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা যে গাড়িটিতে ডিম ছুড়েছে, তারা ভেবেছিলেন সেখানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রয়েছেন। কিন্তু তিনি অন্য গাড়িতে এবং অন্য রুটে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।”
ঘটনার পর লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “আজ আমি আওয়ামী লীগের আক্রমণের একেবারেই কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম।”
-রফিক
এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প
লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে একটি নতুন তথ্যচিত্র— “বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”। এতে মূলত শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯–২০২৩) সংঘটিত দুর্নীতি, বিপুল অর্থ পাচার এবং সেই অর্থ পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জকে ঘিরে বিশদ অনুসন্ধান তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যচিত্রে রাজনীতিক, আন্দোলনকারী, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও আলোচিত হয়েছে।
দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও অভিযোগ
এফটির ভাষ্যে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে—যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থ পাচারের ঘটনা। তথ্যচিত্রে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিমাণ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় নজিরবিহীন”।
বড় প্রকল্পে দুর্নীতি, ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, ভুয়া ঋণ এবং হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাজ্যকে এই পাচারকৃত অর্থের প্রধান গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ভূমিকা ও সম্পদ পুনরুদ্ধার
তথ্যচিত্রে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রিয়েল এস্টেট খাত ও আর্থিক বাজার বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (NCA) ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে অন্তত ৩৫০টি সম্পদ চিহ্নিত ও ফ্রিজ করেছে, যার অধিকাংশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে, যিনি একাই যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক বলে এফটির তদন্তে দাবি করা হয়।
ছাত্র আন্দোলন ও হাসিনার পতন
তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়। পুলিশের গুলি, নিখোঁজ, দমননীতি এবং হাজারো হতাহতের ঘটনায় সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। আগস্টের ৫ তারিখে যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আন্দোলনে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন।
পারিবারিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক
তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের নামও উঠে এসেছে। বিশেষত যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত শেখ রেহানার কন্যা ও লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে দুর্নীতির অর্থে অর্জিত সম্পদ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে, যদিও তিনি তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।
ব্যাংক খাত দখল ও অর্থ পাচার কৌশল
এফটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশ গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর সহায়তায় একাধিক ব্যাংক দখল করে নেয়। ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে বন্দুকের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, পরে নিজেদের লোক দিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। এরপর ভুয়া ঋণ অনুমোদন দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়।
হুন্ডি বা অবৈধ মানি ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক ছিল এ অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও বিপুল অর্থ বিদেশে চলে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও সম্পদ পুনরুদ্ধার
শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি প্রাক্তন আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান মন্সুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্সের প্রধান করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই দেউলিয়া ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে অভিযান শুরু হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুল অর্থ ফেরত আনা একটি “ঐতিহাসিকভাবে জটিল প্রক্রিয়া”। প্রমাণ সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আইনি প্রক্রিয়াই নির্ধারণ করবে কতটা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এই তথ্যচিত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ হাসিনা শাসনামলের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের চিত্রকে নতুনভাবে সামনে এনেছে। এতে যেমন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ভূমিকার দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ একটি দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এনেছে, তা এখন পরীক্ষার মুখে—এই হারানো বিলিয়ন ফেরত আনার মাধ্যমে কি সত্যিই দেশ একটি টেকসই ও জবাবদিহিমূলক পথে অগ্রসর হতে পারবে?
১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তার ভাষায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো জাতি প্রস্তুত এবং সরকার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাগুরায় ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্ষা শেষ হলেই গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় নির্বাচনী আবহ তৈরি হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর যারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তারাও এবার নতুন প্রজন্মের সঙ্গে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করবেন।
তিনি আরও জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। সমঝোতার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, আর এই সংস্কার এখন দৃশ্যমান রূপ পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সংস্কারের কাজ অব্যাহত রয়েছে এবং তা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
শফিকুল আলম সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করেন। তার মতে, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
সামগ্রিকভাবে প্রেস সচিবের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং তা জাতির জন্য একটি গণতান্ত্রিক উৎসব হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই নির্বাচনকে একটি নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।
পাঠকের মতামত:
- শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অস্ত্র মামলায় নতুন মোড়
- উদ্যোক্তা সৃষ্টির আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
- ব্লক মার্কেটে রেকর্ড লেনদেন
- ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) বাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
- ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- তারেক জিয়ার কেন দেশে ফেরা কেন জরুরি?
- উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের মহড়ায় উত্তেজনা
- গুলিবর্ষণের পর প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গেল দিশা পাটানিকে
- ডিএসই–৩০ সূচকে মিশ্র লেনদেন
- গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা, নাসা থেকে বহিষ্কার চীনা গবেষকরা
- ছুটির মুডে অনন্যা পাণ্ডে: ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা
- সরকার পরিবর্তনের ডাক দিলেন ইলন মাস্ক, লন্ডনে বিক্ষোভ
- ন্যাটো সীমান্তে নতুন উত্তেজনা: রাশিয়ার ড্রোন অভিযান প্রসারিত
- ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রীর বড় সিদ্ধান্ত: সরকারি ছুটি কাটছাঁটের পরিকল্পনা বাতিল
- PRIME1ICBA ফান্ডের সাপ্তাহিক এনএভি প্রকাশ
- মেক্সিকো সিটিতে গ্যাস ট্রাক বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৩
- ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে মৌসুমের প্রথম জয় পেল আতলেতিকো
- এমবাপ্পের ঝলকে রিয়াল মাদ্রিদের টানা চতুর্থ জয়
- ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা
- ঢাকায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, শুল্ক কমানোতে নতুন আশার আলো
- আফগান সীমান্তে পাকিস্তান সেনার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি
- ক্যাম্পাস হবে জ্ঞান ও নেতৃত্ব বিকাশের স্থান: শিবির
- এবার মন্ত্রী নির্ধারণে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেপালে
- আজকের ক্রীড়া সূচি (শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর)
- ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে ড. ইউনূসের শোক
- শ্রীলঙ্কার ঝড়ে উড়ে গেল বাংলাদেশ, ৩২ বল বাকি থাকতেই লঙ্কানদের দাপুটে জয়!
- কিংবদন্তি ফরিদা পারভীনের শেষনিঃশ্বাস: শোকস্তব্ধ সংগীতাঙ্গন
- জাকসু নির্বাচনে শিবিরের দাপট, ভিপি পদে স্বতন্ত্রের চমক!
- বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা: আইনি প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কৌশল
- শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে অর্থ পাচারের অভিযোগে নতুন করে আলোড়ন
- বাজার ব্যবস্থাপনায় টেকসই সরবরাহই স্থিতিশীলতার মূলমন্ত্র: শেখ বশির উদ্দিন
- নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে অভিনন্দন জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
- অপারেশন থিয়েটারের আলো: ছায়াহীন বিস্ময়ের বৈজ্ঞানিক রহস্য
- আজকের মুদ্রা বিনিময় হারের বিশ্লেষণ
- বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পাখি: সাউদার্ন ক্যাসোয়ারির রহস্যময়তা ও আতঙ্ক
- জাকসু নির্বাচনের ফলাফল দেওয়ার সময় জানা গেল
- দিশা পাটানির বাড়িতে গুলিবর্ষণ: আতঙ্কে পরিবার, কঠোর নিরাপত্তায় বাড়ি ঘিরে ফেলল পুলিশ
- ম্যানচেস্টার ডার্বির আগে রুবেন আমোরিমের হুঁশিয়ারি: "আমরা ভিন্ন দল"
- ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইতিহাস: ফিল সল্টের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের রেকর্ড জয়
- কিম জং উনের নতুন সামরিক নীতি: একসাথে পারমাণবিক ও প্রচলিত শক্তি বৃদ্ধির ঘোষণা
- মোদি বনাম ভাগবত: বিজেপি–আরএসএস সম্পর্কে ফাটল
- বোলসোনারোর ২৭ বছরের কারাদণ্ড: ব্রাজিলের রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা
- ভূমি মন্ত্রণালয়ে বড় নিয়োগ!
- জানুন নিয়মিত সাঁতারের ছয় বড় উপকারিতা
- রাশিয়ার উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামির আশঙ্কা
- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ঝটিকা মিছিল
- আজ রাতে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ, টিভিতে আরও যা দেখবেন
- ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির আহ্বান তারেক রহমানের
- নিহত সাংবাদিক শিবলীর পরিবারের পাশে দাঁড়াল ছাত্রশিবির
- এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প
- উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতি: জাপান–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সমীকরণ
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার, নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার জরুরি: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
- ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন সামনে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জোর দিলেন ড. ইউনূস
- লিটনের ব্যাটে স্মার্ট জয়: হংকংকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
- উটাহে চার্লি কার্ক হত্যা: রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন ধাক্কায় আমেরিকার গণতন্ত্র ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের সামনে এক অমীমাংসিত সংকট
- জাকসু নির্বাচন: প্রার্থীদের জন্য আজ বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট
- ডোপ টেস্ট কী, কেন করা হয়, কেন এত এখন জরুরি