ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে যত কৌশল

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১০:৫৪:৩৬
ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে যত কৌশল
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসু বাংলাদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকেছে। এবারের নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসংসদ নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছে, যা শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও সাবেক ডাকসু নেতাদের মতে, সুসংগঠিত প্রচারণা, দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের সুবাদেই ছাত্রশিবির অভাবনীয় এই সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের ধারণা, প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সুসংগঠিত প্রচেষ্টা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের কার্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনা প্রত্যাশিতভাবে পৌঁছায়নি।

অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নসহ বামপন্থী সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। এর ফলে শিবিরের প্রার্থীরা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন।

ছাত্রদলের ভরাডুবি: অপ্রস্তুত ও সমন্বয়হীনতা

ছাত্রদলের পরাজয় ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বিএনপির নেতৃত্বও এই ফলাফলে হতবাক। দলীয় নেতাদের ভাষ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ দীর্ঘ সময় ধরে সংগঠিতভাবে কাজ করলেও ছাত্রদলের কার্যক্রম ছিল ছড়ানো-ছিটানো। নির্বাচন ঘিরে কার্যকর কোনো পাল্টা কৌশল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় সংগঠনটি।

ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর বেশ দেরিতে প্যানেল ঘোষণা করায় ছাত্রদল ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’-এর মতো কার্যকর প্রচারণা চালাতে পারেনি। শিক্ষক, নারী ভোটার, সংবাদমাধ্যম কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রেও তাদের উদ্যোগ ছিল অত্যন্ত দুর্বল। উপরন্তু আত্মবিশ্বাসের বাড়াবাড়ি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব ছাত্রদলের অবস্থানকে আরও নাজুক করেছে।

অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমানের বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ছাত্রশিবির প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত ছিল। ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর থেকেই তারা ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। অন্য সংগঠনগুলোও কাজ করেছে, তবে শিবিরের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত কৌশল তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্ম অতীতের সাফল্যের চেয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে বেশি প্রাধান্য দেয়। শিবির এই বাস্তবতাকে কাজে লাগাতে পেরেছে। তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং কর্মীবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় থেকেছে।

ছাত্রশিবিরের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের এক অধ্যাপক মনে করেন, ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আন্দোলনের মতো করে কাজ করেছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মাধ্যমে নারীদের মধ্যে আলাদা সংগঠন গড়ে তুলেছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকেই শিবির ও ইসলামি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তারা সেই পরিবেশ খুঁজে পেয়েছেন এবং সংগঠনমুখী হয়েছেন।

শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা, কোচিং এবং পড়াশোনার নানা সহায়তা প্রদান করে, যা অন্যান্য সংগঠন খুব একটা করে না। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতি আস্থা রাখছে এবং ভোটে সমর্থন দিচ্ছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ডাকসুর ইতিহাসে এক সময় জাসদ-ছাত্রলীগ জোটও শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল। সাবেক জিএস ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিপরীতে কোনো আদর্শিকভাবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল না। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তারা অতীতে অনেক সময় শিবিরের সঙ্গে একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে। তাই ভোটাররা শিবিরকেই শ্রেয়তর হিসেবে বিবেচনা করেছে।

বিএনপির ভেতরের প্রতিক্রিয়া

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ডাকসুর মতো বড় মাপের পরাজয়কে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। প্রকাশ্যে তারা নীরব থাকলেও পর্দার অন্তরালে কারণ অনুসন্ধান চলছে। নেতাকর্মীদের স্বীকারোক্তি, ছাত্রদল সংগঠিত হওয়ার পরিবর্তে হঠাৎ করেই নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করে। এতে বিভিন্ন গ্রুপকে একত্রে আনা সম্ভব হয়নি।

কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খোরশেদ আলম সোহেলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো জামায়াত-শিবির সমর্থিত হওয়ায় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা একচেটিয়া সুবিধা পেয়েছে। কারচুপির অভিযোগ তুললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আবার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের গোপন আঁতাতও নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন তিনি।

-রফিক


৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: নিরাপত্তা, অনিয়ম ও বিতর্কে সরগরম ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১০:০৪:১৫
৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: নিরাপত্তা, অনিয়ম ও বিতর্কে সরগরম ক্যাম্পাস
ছবিঃ সংগৃহীত

৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট ১১ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৮ জন প্রার্থী।

কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে ১,২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গেও সমন্বয় করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তবুও তারা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত।

মাদক, টাকা ও খাবার বিতরণের অভিযোগ

ভোটের আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মাদক সহজলভ্য হওয়ার অভিযোগ করেছেন। জনপ্রিয় আড্ডাস্থল যেমন তারজান পয়েন্ট, সিডনি ফিল্ড ও বিভিন্ন হল এলাকায় মাদক, মদ এবং বিরিয়ানি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, এসব ভোটার প্রভাবিত করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ সরাসরি অর্থ বিতরণের অভিযোগও করেছেন।

স্বতন্ত্র প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাকিল আলী বলেন,

“হলগুলোতে মদ ও মাদক সরবরাহ হচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটারদের বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে। এগুলো অন্যায্য এবং আচরণবিধি ভঙ্গ।”

‘সংসপ্তক পরিষদ’-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন,

“অনেক প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করেছিলাম সবাই নিয়ম মেনে চলবে, কিন্তু তা হয়নি।”

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন এসব অনিয়ম ঠেকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

মনোনয়ন বাতিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার

নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী সাইদা আনন্যা ফারিয়া প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঐক্যের স্বার্থে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

এদিকে, আদালতের আদেশে ‘ঐক্য প্যানেল’-এর ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে ভোটের আগে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

ডোপ টেস্ট নিয়ে বিতর্ক

এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট চালু করা হয়েছে। তবে ভোটের মাত্র দুই দিন আগে টেস্ট শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত কম সময়ে সবাই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে না। সময়সীমা বাড়ানো হলেও অনেক প্রার্থীর নমুনা সংগ্রহ এখনো শেষ হয়নি।

-নাজমুল হোসেন


বিজয়ের পর শিবিরের তিনটি কাজের নির্দেশ

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১০:২৮:৪৬
বিজয়ের পর শিবিরের তিনটি কাজের নির্দেশ
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট শীর্ষ নেতৃত্বের তিনটি পদেই সাফল্য অর্জন করেছে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত ১৬টি হলের ফলাফলে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে তাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে বিভিন্ন হলে ভোট গণনা শুরু হয় এবং ধাপে ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক ফলাফলের চিত্রে স্পষ্ট হয়েছে যে, শিবির–সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়ী হয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি বিশেষ বার্তা প্রকাশ করা হয়। পোস্টটির শিরোনাম ছিল “বিজয়ের পর মুমিন–মুসলিম হিসেবে করণীয়।” সেখানে সংগঠনটি তাদের সমর্থক ও কর্মীদের উদ্দেশে কোরআনের আলোকে নির্দেশনা প্রদান করে।

বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বিজয়ের পর প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য হলো আত্মগরিমা নয়, বরং বিনয় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এজন্য সূরা আন–নাসরের উদাহরণ টেনে বলা হয়, বিজয় লাভ ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর আল্লাহ তাআলা তিনটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন-

১. আল্লাহর নামে তাসবিহ পাঠ করা, অর্থাৎ তাঁর মহিমা ঘোষণা করা।২. আল্লাহর হামদ করা, অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রশংসা জ্ঞাপন করা।৩. আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা, অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা করা।

স্ট্যাটাসের শেষাংশে লেখা হয়, “নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী।” অর্থাৎ বিজয়ের পর আত্মতৃপ্তি বা অহংকারে না ভেসে গিয়ে আল্লাহর কাছে বিনয়ী হয়ে ফিরে আসাই প্রকৃত দায়িত্ব।

-শরিফুল


ঢাবি ডাকসু: ভিপি–জিএস–এজিএস পদে শিবিরের দাপট

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ০৯:৩৩:০৩
ঢাবি ডাকসু: ভিপি–জিএস–এজিএস পদে শিবিরের দাপট
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে দীর্ঘ রাতব্যাপী ভোটগণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল অনুযায়ী ভিপি পদে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রার্থী উমামা ফাতেমা ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট লাভ করেছেন।

জিএস পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্রার্থী এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবু বাকের মজুমদার পেয়েছেন ২ হাজার ১৩১ ভোট, আশিকুর পেয়েছেন ৫২৬ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া মাত্র ৪৬ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে এজিএস পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত মুহাম্মদ মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এই পদে ছাত্রদলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ ৫ হাজার ৬৪ ভোট পান।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও সারারাত ধরে ভোটগণনা চলে। এরই মধ্যে বিভিন্ন হল থেকে ফলাফল আসতে শুরু করলে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে।

ভোটে কারচুপি এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রার্থী উমামা ফাতেমা। সবশেষে চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ডাকসুর শীর্ষ তিনটি পদেই নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, যা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিয়েছে।

-রফিক


ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ২১:৫৩:৪৭
ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর আয়োজিত এ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করলেও সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা দিয়েছে থমথমে পরিস্থিতি।

প্রায় তিন দশকের বেশি সময় পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আয়োজিত এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোরও নানা হিসাব-নিকাশ চলছিল। নানা আশঙ্কা ও আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও গত ১৫ দিনে প্রশাসনের উদ্যোগে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এটি মাত্র অষ্টম ডাকসু নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে, যা ছিল বিতর্কিত।

এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। অন্যদিকে ১৮টি হল সংসদে ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন এক হাজার ৩৫ জন। সব মিলিয়ে একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষে শিক্ষার্থীরা ফলাফলের অপেক্ষায় থাকলেও বিকেল থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলতে শুরু করেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনেই শিক্ষার্থীদের ভিড় জমেছে ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায়।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানান, যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে এবং সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

তবে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগও তুলেছেন বিভিন্ন প্রার্থীরা। ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে যেতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁরা। আচরণবিধিতে অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

অন্যদিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী সাদেক কায়েম শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে হার-জিতের কিছু নেই। জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধা হিসেবে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। তাই শিক্ষার্থীরা যাকে বেছে নেবে, তাকেই মেনে নিতে হবে।” তিনিসতর্ককরেদেন, শিক্ষার্থীদেরওপরকিছুচাপিয়েদেওয়ারচেষ্টাকরলেতাউল্টোফলবয়েআনবে

সব মিলিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শেষে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে মূলত ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা। তবে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সক্রিয় অবস্থানের কারণে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উত্তেজনা, আর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৬:২১:৫৫
৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান দাবি করেছেন, ডাকসু নির্বাচনে কোনো ধরনের স্বচ্ছতার অভাব নেই। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সেনেট ভবনের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

উপাচার্য জানান, ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “কার্জন হলে একটি সামান্য সমস্যা হয়েছিল, যা ভুলবশত ঘটেছে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরও বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করা হবে। যদি কারও দায়িত্বহীনতা প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভিসির এই মন্তব্যকে ঘিরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বা অনিয়মের খবর সামনে এলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

-আলমগীর হোসেন


টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১২:৫০:২৬
টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) বুথগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ কেন্দ্রেই বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা ভোট প্রদান করছেন। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণে দুপুর ১২টার মধ্যে কেন্দ্রটিতে মোট ভোটের প্রায় ৩৫ শতাংশ কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্র প্রধান অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা। তিনি জানান, এখানে মোট ১৯টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। প্রতিটি বুথে গড়ে অন্তত ১২০ জন ভোট দিয়েছেন। এই হিসাবে প্রথম তিন ঘণ্টায় কেন্দ্রটিতে প্রায় ২ হাজার ২৮০ ভোট পড়েছে। তার মতে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।

টিএসসি কেন্দ্রে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৫। ভোট শুরুর আগেই নারী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি চোখে পড়ে। ধৈর্যের সঙ্গে তারা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, যা নির্বাচনের প্রতি তাদের আগ্রহ ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত।

এবারের নির্বাচনে ডাকসুর মোট ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী। ২০১৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকে পেছনে ফেলে এবারের ভোটকে শিক্ষার্থীরা দেখছেন নতুন প্রত্যাশার আলোকে। তাদের আশা, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রকৃত শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রতিফলন।

-রফিক


ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১০:৫৭:৫২
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ মঙ্গলবার। ভোটের আগের দিন নিজের কার্যালয়ে নির্বাচন আয়োজন ও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন প্রকৃত অর্থেই ঐতিহাসিক, কারণ স্বাধীনতার পর মাত্র আটবার এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক চেতনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইতিবাচক ঐতিহ্য রেখে যাওয়ার লক্ষ্য—এই তিন কারণে নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে।

অধ্যাপক নিয়াজ জানান, ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ১১ মাস ধরে প্রশাসন ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবারে ৮১০টি বুথ রাখা হয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ভোটকেন্দ্রগুলো প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে কোনো বিতর্ক না থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, ভোট গণনার সময় প্রার্থীদের প্রতিনিধি, শিক্ষক, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকরাও উপস্থিত থাকবেন। বাইরে বড় পর্দায় গণনার দৃশ্য দেখানো হবে।

তবে সবকিছু সত্ত্বেও উপাচার্য মনে করেন, কোনো আয়োজনেই শতভাগ ‘ফুলপ্রুফ’ ব্যবস্থা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিত কিছু ঝুঁকি থাকতেই পারে, তবে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আনন্দঘন পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমাদের লুকানোর কিছু নেই। সবাই ক্যামেরার অধীনে থাকবে। এ অবস্থায় কেউ রিগিং করার সাহস করবে না।”

সেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে নিয়মিত সেনা উপস্থিতি রয়েছে, তবে ডাকসু নির্বাচনের জন্য তাদের প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করেন না। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে।

উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদেরই অনুষ্ঠান, তাই সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে হবে। তিনি চান, এ নির্বাচন নিয়মিত ক্যালেন্ডারের অংশ হয়ে উঠুক এবং বছরে একবার অনুষ্ঠিত হোক। তিনি আরও জানান, প্রশাসন ইতিমধ্যে উপাচার্যের একক ক্ষমতা কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে—সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম গঠন ও আর্থিক ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয়েছে। ডাকসু সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও উপাচার্য একা নিতে পারবেন না, সিন্ডিকেটের পরামর্শ লাগবে।

প্রার্থীদের দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনের কারণে আবেগ বেশি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রশাসন ও ছাত্র প্রতিনিধি একসঙ্গে বাস্তবায়নযোগ্য কাজগুলো করতে পারবে। তিনি বলেন, “আমরা আল্লাহর নামে এগোচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সমর্থন, সারা দেশের মানুষের শুভকামনা এবং আমাদের সীমিত সামর্থ্যের প্রতিটি পদক্ষেপ মিলেই এই নির্বাচনকে সফল করবে।”


জাকসু নির্বাচন: প্রার্থীদের জন্য আজ বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১০:০২:২৯
জাকসু নির্বাচন: প্রার্থীদের জন্য আজ বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব প্রার্থীর ডোপ টেস্ট আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে জাকসু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। নোটিশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান ও সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম স্বাক্ষর করেন।

নোটিশ অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করা হবে। তবে আলাদা সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য।

জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করবেন। ২১টি আবাসিক হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ডোপ টেস্ট করবেন।

বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে ডোপ টেস্ট

নোটিশে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সব প্রার্থীর ডোপ টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। এর বাইরে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের জাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা আছে যে মাদকাসক্ত কেউ জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এর পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবিতে অনশনে বসেছিলেন। এরপর আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং কেউই এর বিরোধিতা করেনি। তাই কমিশন সব প্রস্তুতি শেষ করে আজকের মধ্যে ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া নির্বাচনী প্রার্থীদের স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাছে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।


ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ০৯:৪১:১০
ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে নির্ধারিত আটটি ভোটকেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। দীর্ঘ বিরতির পর আয়োজিত এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করেছে আলাদা উত্তেজনা ও প্রত্যাশার পরিবেশ।

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি

ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। টিএসসি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ, যাতে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। সকাল থেকেই স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে কাজ করছে পুলিশ ও প্রশাসন।

ভোটার ও প্রার্থী সংখ্যা

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ৬২ জন ছাত্রী। অন্যদিকে ১৮টি হলে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী। ফলে পুরো নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতা দুই-ই প্রবল।

ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া

ভোটাররা তাদের সুবিধাজনক সময়ে কেন্দ্রে গিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দেবেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি কার্ড বা পে-ইন স্লিপ এবং অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, বিশ্ববিদ্যালয় আইডি বা লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় প্রমাণ করবেন। এরপর আঙুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে এবং ভোটার তালিকায় সই করার পর ব্যালট প্রদান করা হবে।ভোটাররা গোপন কক্ষে প্রবেশ করে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে ‘ক্রস চিহ্ন’ দেবেন। ব্যালট ভাঁজ না করে তা নির্ধারিত বাক্সে ফেলতে হবে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্স রাখা হয়েছে। এবারের ব্যালট পেপারের আকারও বড়—ডাকসুর জন্য পাঁচ পৃষ্ঠা এবং হল সংসদের জন্য এক পৃষ্ঠার ব্যালট ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট

প্রথমবারের মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। যারা ব্রেইল পড়তে সক্ষম নন, তারা অন্যের সহযোগিতা নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। এই কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর।

ভোটার ও প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা

সকালের দিকে টিএসসি, কার্জন হলসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থী জানান, জীবনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে ভিন্ন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ রাত জেগে প্রার্থী বাছাই করেছেন বলে জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে, যা প্রমাণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ে আন্তরিক।

অন্যদিকে ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, প্রার্থীদের জন্য আলাদা কোনো কার্ড তৈরি করা হয়নি, ফলে অনেক কেন্দ্রেই তারা প্রবেশে সমস্যায় পড়ছেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক গাউসুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্যানেল

মোট ১০টির মতো আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। শীর্ষ তিন পদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য এবং বামপন্থী সাত সংগঠন সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভোটকেন্দ্র ও সময়

এবারই প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। কার্জন হল, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, সিনেট ভবন, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভূতত্ত্ব বিভাগ এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ—এই আটটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত, তবে যারা চারটার মধ্যে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন, তারা সবাই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন।

সব মিলিয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও অংশগ্রহণমূলক চেতনার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন।

পাঠকের মতামত: