কি এমন কারনে বিএনপি উদ্বিগ্ন?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১৩:৩১:০৭
কি এমন কারনে বিএনপি উদ্বিগ্ন?

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নানা দাবিতে রাজপথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিক্ষোভ, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বিএনপি এই বাস্তবতাকে ‘উদ্বেগজনক ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন’ বলে অভিহিত করে মনে করছে, সংকট উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র গণতান্ত্রিক পথ হলেও সরকারের তরফ থেকে তা নিয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।

দলটির আশঙ্কা, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্বের ফলে একটি অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির দিকেই ধাবিত হচ্ছে দেশ, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।

রোডম্যাপ নেই, প্রশ্নবিদ্ধ পরিকল্পন

গত নয় মাসে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় বিএনপি এটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এমন একটি সময় যখন জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেতে আগ্রহী, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হতে চাইছে, তখন সরকার পরিকল্পনার অভাব ও দ্বিধান্বিত অবস্থান দিয়ে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “জনগণ গত ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত। এখন তারা ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। সরকার যদি দ্রুত রোডম্যাপ না দেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ও রাজপথে নতুন উত্তাপ

গত সপ্তাহে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দাবির মুখে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় এনে দেয়। এর পরপরই শুরু হয় ছাত্র ও নাগরিক সমাজের একের পর এক বিক্ষোভ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ওপর পুলিশি হামলা ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য। এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং বিএনপি এটিকে “সরকারের ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ” বলে অভিহিত করছে।

সরকারি কৌশল নিয়ে প্রশ্ন ও সতর্ক বার্তা

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সরকার সচেতনভাবেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে এবং এক ধরনের কৌশলগত ধোঁয়াশা বজায় রেখে রাজনৈতিক বিরোধীদের দিশেহারা করে তুলতে চাইছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে যদি দীর্ঘায়িত কৌশল গ্রহণ করা হয়, তাহলে সরকারই শেষ পর্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে।”

এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন, কারণ এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান ও আন্দোলন কৌশলের ইঙ্গিতবাহী।

আন্দোলনে না গিয়েও অপেক্ষার কৌশল

তবে বর্তমান সময়ে বিএনপি সরাসরি কোনো দুর্বার আন্দোলনে না গিয়ে সরকারের কর্মকৌশল ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সরকার যদি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তবে বিএনপি তার কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করে রাজপথে সক্রিয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “এখনো আমরা সরাসরি সংঘাত চাই না। তবে সরকার যদি পথ না দেখায়, তখন আমাদের নীরব থাকা সম্ভব হবে না।”

সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের সংকট

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা মনে করে, এসব সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অগ্রগতি থমকে আছে।

দলটি বলছে, সরকার যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাদের রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক বিভক্তি স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া।

জনমানসে ক্ষোভ ও অনাস্থার সঞ্চার

বিএনপির মতে, রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ ও অনাস্থা তৈরি হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। গুম, খুন, নির্যাতনের মধ্যে দিয়েও তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়া জনমনে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি করছে।”

উপসংহার: কী হবে আগামী দিনে?

বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিএনপির অবস্থান অনেকটা দ্বৈত কৌশলনির্ভর। একদিকে তারা সরকারকে সময় ও সুযোগ দিচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য, অন্যদিকে তারা বারবার সতর্ক বার্তা দিচ্ছে যে, ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করলে রাজনৈতিক প্রতিরোধ অনিবার্য হয়ে উঠবে।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘিরে তৈরি হওয়া এই অনিশ্চয়তা শুধু বিএনপি নয়, গোটা দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ