অবশেষে মানা হল দাবি! কিভাবে হবে বাস্তবায়ন?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১২:৩০:০৩
অবশেষে মানা হল দাবি! কিভাবে হবে বাস্তবায়ন?

দীর্ঘদিনের দাবির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশেষে সমাধানের দিকে অগ্রসর হলো। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর আন্দোলনের ইতি ঘটে। শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল কাকরাইলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ নিজ হাতে শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান এবং দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।

সমাধানের পথে শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথমে তিনটি মূল দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। সেগুলো হলো—২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনোরকম কাটছাঁট না করে অনুমোদন, এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন। কিন্তু ১৪ মে আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনার পর আন্দোলনে যুক্ত হয় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি—ঘটনার তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।

এই চার দফা দাবিকে কেন্দ্র করে জবির শিক্ষার্থীরা একযোগে শান্তিপূর্ণ গণঅনশন, মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান। এই আন্দোলন ক্রমে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং প্রশাসনের ওপর বাড়তে থাকে চাপ।

প্রশাসনের অবস্থান ও অগ্রগতি

শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা আজ সারা দিন আপনাদের দাবি নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে আপনাদের পাশে আছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—সব কিছু একসঙ্গে বসে সমাধান করব এবং বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

তিনি এই সংকটকে ‘পারিবারিক’ এবং ‘সহানুভূতিশীল সমাধান’-এর অংশ বলে উল্লেখ করেন, যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করে। ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করেন।

এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “ইউজিসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেট বাড়ানো হচ্ছে, যার মাধ্যমে আবাসন বৃত্তি চালু করা যাবে। অস্থায়ী হল নির্মাণ এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।”

তাছাড়া, পুলিশি হামলার বিষয়ে উপাচার্য জানান, পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সাত দিনের মধ্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

আন্দোলনের তাৎপর্য ও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন ছিল কেবলমাত্র কিছু দাবি আদায়ের সংগ্রাম নয়। এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোগত সংকট, বাজেট বরাদ্দে বৈষম্য, এবং ছাত্রকল্যাণ সংক্রান্ত অবহেলার একটি প্রতিবাদী প্রতিচ্ছবি। এই আন্দোলন আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—ছাত্রদের কণ্ঠকে উপেক্ষা করা নয়, বরং সম্মান জানিয়ে সমস্যা সমাধান করা গণতান্ত্রিক শাসনের অন্যতম ভিত্তি।

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষোভের পেছনে রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার একাধিক অসঙ্গতি: অপর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা, বাজেট অনুমোদনে স্বচ্ছতার অভাব, এবং উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি। এই বাস্তবতাগুলো শুধুমাত্র জবির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও মিলেছে এসব সংকটের ছাপ।

ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি, নাকি সময়ক্ষেপণ?

সরকার ও ইউজিসির আশ্বাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তাৎক্ষণিক সমাপ্তি আনলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য এবং কত দ্রুত তা রূপ পাবে বাস্তবে? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক সময়েই প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে ঘোষণার মধ্যেই। তাই শিক্ষার্থীদের আস্থা ধরে রাখতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান রক্ষা করতে হলে দ্রুত, কার্যকর এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো, শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্যের অঙ্গ। যে রাষ্ট্র তার শিক্ষার্থীদের শুনতে পারে, তাদের দাবিকে গুরুত্ব দেয় সেই রাষ্ট্রই ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়।

এই আন্দোলন, তার শান্তিপূর্ণ পরিণতি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এখন দেখার বিষয়, এই মাইলফলক আগামী দিনে আরও ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে কি না।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত