৯০ হাজার জীবন এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলার এর বিনিময়ে বিশ্বের স্বীকৃতি দাবি পাকিস্তানের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১১:২৫:২৩
৯০ হাজার জীবন এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলার এর বিনিময়ে বিশ্বের স্বীকৃতি দাবি পাকিস্তানের

সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান শুধু নিজের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে অবদান রেখেছে, তা এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছে ইসলামাবাদ। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ইসলামাবাদে এক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন,

"পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। আমরা হারিয়েছি প্রায় ৯০ হাজার জীবন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার।"

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংগ্রাম কেবল দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়নি, বরং সন্ত্রাসবাদ যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যেও পাকিস্তান নিজেদের আত্মত্যাগ দিয়েছে। "যদি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই না করত, তাহলে তারা আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ত।" প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বকে পাকিস্তানের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং এ অঞ্চলের জিও-সিকিউরিটি বাস্তবতা বুঝে দায়িত্বশীল অবস্থান নিতে হবে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতা

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে অসংখ্য সফলতা থাকলেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটি প্রায়ই দ্বৈত অবস্থানের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষত আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি তথাকথিত ‘সহনশীলতা’ পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের বিষয় ছিল।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামাবাদ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে জড়িত। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেবল আত্মসমর্থন নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন রূপে

এই বক্তৃতার প্রেক্ষাপট আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানান, "পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান মিরাজ-২০০০ গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার অবস্থান কাশ্মীরের পামপুর এলাকায়।" এর মাধ্যমে চলমান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী ভারতীয় ভূপাতিত যুদ্ধবিমানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬-এ।

কাশ্মীর ইস্যু ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা

এই নতুন সংঘাতের সূত্রপাত হয় ৬ মে, যখন ভারত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বিমান হামলা চালায়। ওই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পাকিস্তান পরে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্ত বরাবর হামলা চালায়। অবশেষে ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের দাবি, তারা শুধু আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করছে এবং যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী।

কৌশলগত বার্তা ও আন্তর্জাতিক অবস্থান

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ভাষ্য এবং প্রতিক্রিয়া একদিকে নিজের আত্মরক্ষার বার্তা, অন্যদিকে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি কৌশলগত ‘সিগনাল’। ইসলামাবাদ দৃশ্যত চাইছে যে, তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও ভূ-অর্থনৈতিক সংকট যেন সন্ত্রাসবাদের ছায়ায় ঢেকে না যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের বার্তা যতটা অভ্যন্তরীণ শ্রোতাদের জন্য, তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য – বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব, চীন এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর উদ্দেশ্যে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ