প্রাণঘাতী সহিংসতা, তীব্র বিক্ষোভ এবং প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর নেপাল এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক মোড়ে দাঁড়িয়ে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া সহিংসতায় দেশটির পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই সেনাবাহিনী ক্ষমতার ভার নেয়। ৩ কোটি মানুষের এই হিমালয়ি দেশটি এখন প্রশ্নের মুখে—কে নেবে নেতৃত্ব, কেমন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?
সেনা তত্ত্বাবধানে অস্থির পরিস্থিতি
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল বুধবার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি—যাদের Gen Z নামে অভিহিত করা হচ্ছে—এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হয়নি। সেনারা আপাতত শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে সেনা তত্ত্বাবধান দীর্ঘ হলে রাজনৈতিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সংবিধান ও অন্তর্বর্তী সমাধান
সংবিধান অনুযায়ী, ৮০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলকে বৃহত্তম দলের নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব কার্যত অদৃশ্য। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি—যাকে সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে—বলেছেন,
“সব রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। পার্লামেন্ট এখনো বিদ্যমান, সেটিই হতে পারে সংলাপের মঞ্চ।”
কিন্তু সমস্যার গভীরতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে সীমাবদ্ধ নয়। সংকটগোষ্ঠী ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক আশীষ প্রধানের ভাষায়,
“এবারের জনরোষ পুরো রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি। সাধারণ মানুষ কেবল একজন নেতাকে নয়, পুরো ব্যবস্থাকেই প্রত্যাখ্যান করছে।”
যুবশক্তির উত্থান
Gen Z নামের ব্যানারে তরুণরা বেকারত্ব, দুর্নীতি ও সুযোগের অভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। সরকারের স্বল্পমেয়াদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করে। আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা কাঠমান্ডুর মেয়র, র্যাপার-থেকে-প্রকৌশলী বালেন্দ্র শাহ এবং যুব অধিকার সংগঠন হামি নেপালের নেতা সুধান গুরুং। তারা দাবি করছে, সহিংসতার জন্য তরুণরা দায়ী নয়; বরং আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখাই তাদের লক্ষ্য।
সাংবাদিক প্রণয় রানা সতর্ক করে বলেন,
“যুব আন্দোলনকে ছায়ায় থাকা সুযোগসন্ধানীদের হাতে চলে যেতে দেওয়া যাবে না। এখন দরকার ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব।”
পুরনো প্রজন্মের পতন
কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা ও চারবারের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি পদত্যাগের পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর সাবেক মিত্র ও পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাকেও দেখা যায়নি। দুই নেতার ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিও জনরোষে ভেসে গেছে।
রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ
২০০৮ সালে নেপাল রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়। ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের প্রতি কিছু জনসমর্থন ফিরে এলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম। ক্রাইসিস গ্রুপ সতর্ক করে বলেছে,
“রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হলে তা স্বৈরতান্ত্রিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
-সুত্রঃ এ এফ পি