শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুমতিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম চালানে সাড়ে ৩৭ টনের বেশি ইলিশ ৮টি ট্রাকে করে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ভারতের পেট্রাপোলে প্রবেশ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, কলকাতাভিত্তিক পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ট্রেডিং, এফএনএস ফিশ, জয় শান্তসী, মা ইন্টারন্যাশনাল ও আর জে ইন্টারন্যাশনাল প্রথম চালানের ইলিশ আমদানি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সততা ফিশ, স্বর্ণালি এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস ট্রেডার্স ও লাকি ট্রেডিং নামের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এই চালানে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সরকার এ বছর দুর্গোৎসব উপলক্ষে মোট ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ৩৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির কোটা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজার আগে ভারতের বাজারে পদ্মার ইলিশ পৌঁছাতে পারায় সেখানকার ভোক্তাদের মাঝে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তথ্যমতে, গত বছর ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮১৩ মেট্রিক টন, যা অনুমোদিত পরিমাণের মাত্র ৪৪ শতাংশ। ইলিশের সংকট এবং উচ্চমূল্যের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কোটার পুরোটা রপ্তানি করতে পারেনি। বিশ্বাস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূরুল আমিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, এ বছরও একই কারণে পূর্ণ কোটায় রপ্তানি সম্ভব নাও হতে পারে।
ভারতের ফিস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ মন্তব্য করেন, এ বছর ইলিশের পরিমাণ কম হলেও পূজার আগে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মানুষ পদ্মার ইলিশের স্বাদ পাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সুযোগ দেওয়ায় এপার বাংলার মানুষ গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজিব সাহা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানির অনুমোদিত কোটা শেষ করতে হবে। প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ৫৩৩ টাকা সমপরিমাণ। এবার রপ্তানিকৃত প্রতিটি ইলিশের গড় ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিশেষ বিবেচনায় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে আসছে সরকার। ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টনের অনুমতি দেওয়া হলেও বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন। ২০২২ সালে অনুমোদন ছিল ২ হাজার ৯০০ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬০০ টন অনুমতি থাকলেও রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ টন। এর আগের বছর ২০২০ সালে অনুমতি ছিল ১ হাজার ৪৫০ টন এবং ২০১৯ সালে ৫০০ টন, তখন যথাক্রমে ১ হাজার ৪৭৬ ও ৪৭৬ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল।
-রফিক