রাশিয়া-ইউক্রেইন শান্তি বৈঠক

ট্রাম্প-পুতিন ছাড়া আলোচনার দরজা বন্ধ?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৬ ০৮:৩২:০৯
ট্রাম্প-পুতিন ছাড়া আলোচনার দরজা বন্ধ?

সত্য নিউজ: তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আয়োজিত বহুল প্রত্যাশিত রাশিয়া-ইউক্রেইন শান্তি বৈঠক কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুপস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরে দাঁড়ানোয় আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

বৃহস্পতিবার, মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্যে এয়ার ফোর্স ওয়ানে যাত্রার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,

“দেখুন, পুতিন আর আমি একসঙ্গে না বসা পর্যন্ত কিছুই হবে না। স্পষ্টতই, তিনি (পুতিন) সেখানে যেতেন না। তিনি যেতে চেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন আমিও যাচ্ছি। আমি না গেলে তিনি যাচ্ছিলেন না।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, আমি মনে করি না যে, পুতিন ও আমি একসঙ্গে না বসলে কিছুই হবে। আমাদের একসাথে বসতেই হবে। কারণ, অনেক মানুষ মরছে।”

একতরফা উপস্থিতি ও ‘ডামি প্রতিনিধি দল’

এদিকে, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তুরস্কে পৌঁছান এবং সরাসরি আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও শীর্ষ উপদেষ্টারা।

কিন্তু রাশিয়া আলোচনায় পাঠায় একটি নিম্ন-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল, যা কিয়েভের দৃষ্টিতে ছিল শুধুমাত্র প্রতীকী।জেলেনস্কি অভিযোগ করেন,

“রাশিয়া এক ধরনের ‘ডামি’ দল পাঠিয়েছে, যাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। এতে স্পষ্ট হয়, মস্কোর উদ্দেশ্য প্রকৃত শান্তি নয়, বরং আলোচনাকে নাটকীয় রূপ দেওয়া।”

আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপট

রোববার, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘কোনও শর্ত ছাড়া’ আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। জেলেনস্কিও তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সাড়া দেন।আশা করা হয়েছিল যে, তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেইনের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা সরাসরি এক টেবিলে বসবেন, যা হয়তো যুদ্ধ অবসানের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

প্রাথমিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও এই বৈঠকে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনিও সরে দাঁড়ান, ফলে আলোচনা কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।

ইউক্রেইনের অবস্থান বনাম রাশিয়ার কঠোর বার্তা

ইউক্রেইনের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় রাখা, রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো এবং ট্রাম্পকে বোঝানো যে, শান্তির পথে মূল বাধা রাশিয়া নিজেই।কিন্তু রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জেলেনস্কির উপস্থিতিকে তুচ্ছ করে বলেন,

“যুদ্ধবিরতির মানে হবে ইউক্রেইনকে নতুন করে অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া।”

রাশিয়া পুনরায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করা পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের লক্ষ্যগুলো তারা বজায় রাখবে। এর মধ্যে রয়েছে-

  • ইউক্রেইনের নিরস্ত্রীকরণ
  • নেটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ
  • রুশ ভাষা, গির্জা ও সংস্কৃতির সামাজিক আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা

শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

তুরস্কে আয়োজিত বৈঠককে কেন্দ্র করে যে সামান্য আশার আলো দেখা দিয়েছিল, সেটি এখন নিভে যাওয়ার পথে। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন ও ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া এ আলোচনায় বাস্তব কোনো অগ্রগতি আশা করা দুরূহ।

বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ট্রাম্প ও পুতিন আদৌ একসঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না, আর শান্তি আলোচনার পরবর্তী অধ্যায় কখন এবং কোথায় শুরু হবে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, ইসলামিক নিউজ নেটওয়ার্ক, হোয়াইট হাউস ব্রিফিং

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ