মূল্যস্ফীতি কমছে, ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ শতাংশে নেমে আসবে: মুহাম্মদ ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ২২:২০:৩৭
মূল্যস্ফীতি কমছে, ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ শতাংশে নেমে আসবে: মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণকে দেশের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বন্যা এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং তারা আশা করেন ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে যাবে।

তিনি আরও জানান, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ছিল, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা এবং বাজারে নজরদারির কারণে দাম বৃদ্ধির প্রভাব কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে এ বছরের রমজান থেকে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মূল্যস্ফীতির সামগ্রিক হ্রাসের প্রমাণ হিসেবে জুন মাসের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তিনি জানান, চার মাস ধরে ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি কমছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রবাসীদের দেশের প্রতি আস্থা বাড়ায় মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয়ও প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টাকার মান শক্তিশালী করেছে। উল্লেখ করেন, গত ১১ মাসে বৈদেশিক পাওনাদারদের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ। বকেয়া পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এসেছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের সরকারের শেষ ছয় মাসের দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বড় লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সম্প্রতি হংকংভিত্তিক হানডা গোষ্ঠী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এখাতে চীনা কোম্পানির সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং এটি আরও চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করবে।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, গত ১৬ বছরে দেশের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। সরকার নামকরা বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু অর্থ জব্দ করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল আশা করা যায়।

অবশেষে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। দেশের নদী ও সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ