মহসিনের যন্ত্রণার গল্প: গুলিবিদ্ধ, স্বীকৃতি নেই, সহায়তাও মেলেনি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১৮:৩৫:২৫
মহসিনের যন্ত্রণার গল্প: গুলিবিদ্ধ, স্বীকৃতি নেই, সহায়তাও মেলেনি
ছবি : কালের কণ্ঠ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ঘোড়াবান্ধা বালুখোলা গ্রামের তরুণ মহসিন সরকার মিঠুন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ২০২২ সালে এসএসসি পাস করার পর বাবার ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে লেখাপড়া ছাড়তে হয় তাকে। জীবিকার খোঁজে চলে যান গাজীপুরে, সেখানে শ্রমিকের কাজ নেন। কিন্তু হৃদয়ে লুকানো ছিল একটি স্বপ্ন—স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে দেশের পাশে দাঁড়ানো।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন মহসিন। আনসার একাডেমির সামনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। তার শরীরে ঢুকে পড়ে দুই শতাধিক গুলি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর অনেক গুলি অপসারণ করা সম্ভব হলেও এখনো শরীরে রয়েছে ৩০টির বেশি গুলি। প্রতিদিন সেগুলোর যন্ত্রণাই তাকে মনে করিয়ে দেয় সেই দিনটির কথা।

চিকিৎসা শেষে এখন তিনি গাইবান্ধায় ফিরে এসেছেন। অভাব আর অবহেলার জীবনেই চলছে তার প্রতিদিনের লড়াই। ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি তিনি। নেই কোনো সরকারি সহায়তাও। তার মা চোখে জল ধরে বলেন, “মহসিনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, সবকিছু ভেঙে গেছে।”

স্থানীয়রা বলছেন, দেশের জন্য এমন ত্যাগ যিনি করেছেন, তার ন্যায্য স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা সদস্যসচিব বায়োজিদ বোস্তামী জীম জানিয়েছেন, বাদ পড়াদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রক্রিয়া নেওয়া হবে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেছেন, “আবেদন পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিমান নিয়ে মহসিন বলেন, “সবার কাছে বলেছি, কোনো কাজ হয়নি। শুধু চাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার সুযোগ, অন্য কিছু না।”

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে দাঁড়ানো এই তরুণের প্রশ্ন—দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ে তার এই ত্যাগ কি অবশেষে কোনো সম্মান পাবে? রাষ্ট্র কি মনে রাখবে তার নাম?

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ