৫ আগস্ট দিল্লিতে কী ঘটেছিল? শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রার্থনার গোপন অধ্যায়

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১৬:১৬:১২
৫ আগস্ট দিল্লিতে কী ঘটেছিল? শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রার্থনার গোপন অধ্যায়
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। সকালে দিল্লির মূল ব্যস্ততা ছিল ভারতের সংসদের মনসুন অধিবেশন ঘিরে। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে বিকেল হতেই দেশটির প্রশাসনের সামনে হাজির হয় এক অনাকাঙ্ক্ষিত কূটনৈতিক মুহূর্ত। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎই দিল্লিতে আশ্রয়ের অনুরোধ জানান। বিষয়টি রাইসিনা হিলস থেকে দক্ষিণ ব্লকের নিরাপত্তা ইউনিট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই।

সেদিন সকাল থেকেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সতর্ক ছিলেন। 'মার্চ টু ঢাকা' আন্দোলনের প্রভাবে ঢাকার রাজপথ তখন উত্তপ্ত। যদিও ভারতের গোয়েন্দা তথ্য বলছিল, শেখ হাসিনার সরকার টিকে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও ছিল না যে তিনি হঠাৎ দেশ ছাড়বেন।

দুপুরের পর সেই ধারণা বদলে যায়। প্রথমে শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরে ফোন যায়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আশ্রয়ের অনুরোধ জানান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ভারতের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে সামরিক বিমান নামানোর অনুমতি চায়।

দিল্লি তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি দেয়। ভারতীয় প্রশাসন বুঝতে পারে, শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় আলোচনায় আসে—বাংলাদেশ চেয়েছিল ভারত যেন একটি বিশেষ বিমান পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে নেয়। কিন্তু ভারত সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি নিজ দেশের সামরিক বিমানে করেই আসবেন। কারণ, পরবর্তীতে যাতে কেউ দাবি না করে—“ভারত তাকে উদ্ধার করেছে।” ভারত নিজেকে নিরপেক্ষ আশ্রয়দাতা হিসেবে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

দিল্লিতে অবতরণের পর শেখ হাসিনার চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। অনেকে ভাবেন, তিনি হয়তো নরওয়ে, সুইডেন বা বেলারুশের দিকে যাবেন। কিন্তু ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার মূল পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাজ্যে যাওয়ার। শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় সে সম্ভাবনা শক্ত ছিল।

প্ল্যান অনুযায়ী, সেদিন রাতেই লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্রিটেনে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। দিল্লিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূত ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সরাসরি জানান, যুক্তরাজ্য শেখ হাসিনাকে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।

ফলে পরবর্তী গন্তব্য অনির্ধারিত থেকে যায়, আর দিল্লির কূটনৈতিক ইতিহাসে ৫ আগস্ট একটি অনন্য দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ