গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে তারেক রহমান 

"জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আর কখনোই ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে না"

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১২:০১:৪৬
"জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আর কখনোই ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে না"
ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৪ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে, যখন হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে এই দিনটি নতুন আশা ও বিজয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সরকারিভাবে এই দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে এবং প্রতিবছর আজকের দিনটিকে সরকারি ছুটির মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, একুশ শতকের বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এক পলাতক স্বৈরাচারের অধীনে গুম, খুন, অপহরণ, মামলা ও নির্যাতন এক স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিএনপি সহ বিভিন্ন মতের গণতন্ত্রপন্থী শক্তি দীর্ঘ দেড় দশক ধরে সংগ্রাম করেছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে লাখো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মিথ্যা মামলা ও প্রলোভনের শিকার হন, অনেকের পরিবারবর্গ বিচ্ছিন্ন হয়।

তাঁর কথায়, স্বৈরাচারের নির্দেশে গোপন বন্দীখানায় হাজারো মানুষ বন্দী ছিলেন, অনেকেই আজও নিখোঁজ। বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া অবহেলিত হয়ে পড়েছিল, যা সংবিধানের মূল নীতির পরিপন্থী। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রাজনীতির নামে সহিংসতা ও অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থা এলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয় এবং ব্যক্তিত্বতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধ প্রতিবাদে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে পুলিশি গুলিতে ১৫০০ এর অধিক মানুষ শহীদ হন, এবং আহত হয় প্রায় ৩০ হাজার। শিশু থেকে প্রবীণ, ছাত্র থেকে শ্রমিক—সবাই সহিংসতার শিকার হন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ হিসেবে স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের মতো আজও আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় অমুল্য।

তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে হবে—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলে। এজন্য সরাসরি ভোট ও জবাবদিহিমূলক সরকারের প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ।

তারেক রহমান সতর্ক করেন যে, পলাতক ফ্যাসিস্ট শাসনের গৌরব করা গ্রহণযোগ্য নয়, এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শাসনের তুলনা করা অনুচিত। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায়, যেখানে ফ্যাসিস্ট শাসক গণভবন ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। যদিও ফ্যাসিস্টের দোসররা এখনো দমে যায়নি, তবুও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আর কখনোই ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে না।

শেষে তিনি সকল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রপ্রেমীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক বিরোধীতা ভিন্নমত প্রকাশের অংশ, কিন্তু তা যেন কখনো ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ বা চরমপন্থার জন্ম না দেয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে গণতন্ত্রের সূচনা ও স্থায়িত্ব বজায় থাকে।

-রাফসান

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ