যে কারণে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান বর্জন করলেন হান্নান মাসউদ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১০:০০:০৮
যে কারণে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান বর্জন করলেন হান্নান মাসউদ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। একইসঙ্গে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশনও।

মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে হান্নান মাসউদ স্পষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, তাকে ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দেওয়া হলেও পুরো আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি শহীদ পরিবারগুলোকেও এ আয়োজনে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষায়, “জানিনা এই চেয়ারগুলোতে শহীদ পরিবারের জায়গা হবে কি না! যাদের সাহসিকতায় এই অভ্যুত্থান ঘটেছে, আজ তাদের মূল্যই নেই।” তিনি আরও লেখেন, “যারা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের যথাযথ সম্মান না দিলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।”

ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে হান্নান লেখেন ‘#Loud_And_Clear’—যা তার অবস্থান ও ক্ষোভের গভীরতা স্পষ্ট করে তোলে।

অন্যদিকে, বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, “যেসব তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে জীবন বাজি রেখে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অনেককেই এ আয়োজনে উপেক্ষা করা হয়েছে। শহীদ পরিবার, আহত এবং নিপীড়িত কর্মীদের মর্যাদা না দিয়ে সরকার নিজেদের প্রচারের আয়োজনে ব্যস্ত। তাই আমরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একটি গণভিত্তিক আন্দোলনের ফল। এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল সংগঠকদের উপেক্ষা করে সরকার যদি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে, তাহলে তা ভবিষ্যতে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। তারা মনে করেন, আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারদের যথাযথ সম্মান না জানিয়ে এই ধরণের আয়োজন গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার, যারা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করে। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সেই সংস্কারের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণে ভূমিকা রাখার কথা।

কিন্তু এমন এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে, যেখানে আন্দোলনের ফসল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে পরিণত হচ্ছে, সেখানে মূল সংগঠকদের অভিযোগ তাদের সম্মান দেওয়া হয়নি, অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের মতে, এই আয়োজন কেবল প্রচারমূলক অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নৈতিকতা ও ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুপস্থিত।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ