জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিয়ে বিএনপির ব্যাখ্যা: 'এটি জনগণের অভিপ্রায়, আইনের ঊর্ধ্বে'

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ২০:৪০:৩৩
জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিয়ে বিএনপির ব্যাখ্যা: 'এটি জনগণের অভিপ্রায়, আইনের ঊর্ধ্বে'
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’–এর আইনি ভিত্তি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই সনদ সরাসরি জনগণের অভিপ্রায় থেকে উৎসারিত। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্যের বহিঃপ্রকাশ, যা আইনেরও ঊর্ধ্বে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপের ২৩তম দিনে বিরতির সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই সনদ জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতে গৃহীত হচ্ছে। আমরা এটিকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছি। এটা আইনগত নয়—এটা সাংবিধানিক বৈধতা পাচ্ছে জনগণের সম্মতির মাধ্যমে। একে “লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন অব দ্য পিপল” বলা চলে।’

তিনি জানান, খসড়া সনদে কিছু বাক্যগত অসামঞ্জস্য ছিল, যা বিএনপি সংশোধন করেছে। সনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বলা হয়েছে, নতুন সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সনদে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও আইনগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি শুধু কমিশনের উদ্যোগ নয়—এখানে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে। ফলে এটি একটি সম্মিলিত জাতীয় দলিল হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে এ সনদের জন্ম, আর এটিকে আমরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চাই। “যদি এটাকে আমরা আইনি ভিত্তি না বলি, তাহলে আর কাকেই বা বলবো?”—জানান তিনি।

উচ্চকক্ষ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বিএনপির অবস্থান

বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, সংসদের উচ্চকক্ষ আইন প্রণয়ন করবে না বরং প্রণীত আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশ করবে। সালাহউদ্দিন স্পষ্ট করে বলেন, উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের কোনো এখতিয়ার থাকা উচিত নয়। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা কেবল নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি জানান, বিএনপি চাইছে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ যৌথভাবে আইন পাস করুক, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয়েছে "শেয়ারড লেজিসলেটিভ প্রসেস"।

তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কিছু পক্ষ অনির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে, যা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীন ভোট

৭০ অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন জানান, বিএনপি প্রস্তাব করেছে যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যরা দলীয় নির্দেশনার বাইরে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। এ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় এখন এমপিরা গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে প্রস্তাব

বর্তমানে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে বিএনপির মতে, রাষ্ট্রপতির আরও কিছু স্বাধীন দায়িত্ব থাকা উচিত—যা আলোচনা শেষে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, মৌলিক অধিকার বিষয়েও আলোচনা চলছে। বিএনপি প্রস্তাব করেছে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু অধিকার যেমন ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার সংবিধানে যুক্ত করা যায় কি না, তা বিবেচনা করতে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, একবার সংবিধানে যুক্ত হলে এসব অধিকার রাষ্ট্রের ওপর বাধ্যতামূলক হবে এবং নাগরিকেরা প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ঐকমত্য, তবে আপত্তি রয়ে গেছে

তিনি জানান, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত শব্দাবলি যেমন—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি—যুক্ত করার বিষয়ে বিএনপি একমত। তবে কিছু দলের আপত্তির কারণে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

একই সঙ্গে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে একটি মধ্যবর্তী সাংবিধানিক ব্যবস্থা গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, এবং কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান সালাহউদ্দিন।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ