শেখ হাসিনার নির্দেশে গোপন গেরিলা প্রশিক্ষণে ঢাকা দখলের ষড়যন্ত্র ফাঁস

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১৬:০৪:১৪
শেখ হাসিনার নির্দেশে গোপন গেরিলা প্রশিক্ষণে ঢাকা দখলের ষড়যন্ত্র ফাঁস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রের ছায়া স্পষ্ট হতে শুরু করে। পরাজিত রাজনৈতিক শক্তিগুলো নানা কৌশল ও অপতৎপরতার মাধ্যমে নতুন সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা চালায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যর্থতার পরিমাণ বেড়ে গেলে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেই দেশের রাজধানী ঢাকা দখলের ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়।

সরকারের বিশ্বস্ত সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, ঢাকা দখলের জন্য একটি সুসংগঠিত গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করে হাইকমান্ডের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া মাত্র রাজধানী দখল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশ-বিদেশে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের কোর গ্রুপ প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করেছে, আর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গেরিলা বাহিনীতে শুধু ছাত্রলীগ নয়, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছে, যারা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশেষভাবে গেরিলা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ভারতীয় শহর দিল্লি ও কলকাতা ছাড়াও দেশের ঢাকা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সরকারের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে সরকারবিরোধী নানা স্লোগানও দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়েই স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি শুরু করে। ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযানে গ্রেফতার হয় দু’জন সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন শম্পা। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন ঢাকা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।

গ্রেফতারকৃত সোহেল রানার পিতা বরগুনার তালতলী থানার মৌপাড়া গ্রামের আব্দুস সোবহান গোলন্দাজ। শামীমা নাসরিন শম্পার স্বামী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, যার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বড়াশুর গ্রামে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা উল্লেখ করেছে, রাজধানী দখলের পরিকল্পনায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তালিকাভুক্ত নেতাকর্মীরা একযোগে শাহবাগ মোড়ে সমবেত হবে। শাহবাগ দখল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জানানো হবে, ‘আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ কর্মী রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং প্রশাসনও তাদের পক্ষে রয়েছে।’

এতে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো প্রকট হবে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্ব মাঠে নামবে, যা সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধির পথ সুগম করবে। পরবর্তী ধাপে শেখ হাসিনাকে ভারতে থেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। পরিস্থিতি ও সময় বুঝে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার কামরুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, ‘এটি একটি বিস্তৃত এবং সুপরিকল্পিত কার্যক্রম। তদন্ত এখনও চলমান, তাই বিস্তারিত তথ্য এখন প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ কাজে ডিবি ছাড়াও আরও কয়েকটি সংস্থা যুক্ত রয়েছে।’

অপর একটি গোপন সূত্র বলছে, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। সরকার এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। একটি বিশ্বস্ত আইনশৃঙ্খলা টিম গঠন করে পুরো চক্রকে শেষ পর্যন্ত ধরে ফেলার লক্ষ্যে গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে, যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘দেশে কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই। নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি আরো জানান, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের নিজস্ব উদ্যোগে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। এটি দেশের সর্বত্র পরিচালিত অভিযান নয়, শুধুমাত্র ডিএমপির সীমিত উদ্যোগ।’

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ