বরফে ঢাকা আর্কটিক এখন সবুজ, গবেষণায় প্রকাশ পেল বিপর্যয়ের চিত্র

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ২১:৪২:৩৬
বরফে ঢাকা আর্কটিক এখন সবুজ, গবেষণায় প্রকাশ পেল বিপর্যয়ের চিত্র
ছবি: সংগৃহীত

আর্কটিকের শীতকালেও বরফের বদলে বৃষ্টি, সবুজে ঢাকা ভূমি—চরম জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন সতর্কবার্তা

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন তুষারপাত গবেষণার জন্য সুমেরু অঞ্চলে গিয়েছিলেন কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একদল বিজ্ঞানী। তবে বরফে ঢাকা দৃশ্যের বদলে সেখানে গিয়ে তারা পেয়েছেন ভারি বৃষ্টি ও সবুজ ভূমি। বরফের বদলে বর্ষায় ভেজা জলাশয় দেখে গবেষকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এই গবেষণার অভিজ্ঞতা শুধু তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই বদলায়নি, বরং আর্কটিক অঞ্চলের বিপর্যয়কর আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন করে সতর্ক করেছে বিশ্বকে।

নরওয়ের সভালবার্ড দ্বীপে চালানো এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে 'নেচার কমিউনিকেশন্স' নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে। গবেষণায় উঠে এসেছে, সভালবার্ডের তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ বেশি গতিতে বাড়ছে। বরফে ঢাকা শীতকালের বদলে এখন সেখানে নিয়মিত উষ্ণ তাপমাত্রা, ভারি বৃষ্টি ও দ্রুত বরফ গলার ঘটনা ঘটছে।

গবেষণার প্রধান ড. জেমস ব্র্যাডলি জানিয়েছেন, তারা যখন বরফের প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে পৌঁছান, তখন তাদের সঙ্গে থাকা ঠাণ্ডার পোশাক ও গ্লাভস ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। কারণ পুরো অঞ্চলজুড়ে ছিল বৃষ্টিপাত ও বরফ গলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সদ্য পড়া তুষার বিশ্লেষণ করা, কিন্তু দুই সপ্তাহের পুরো সময়ে মাত্র একবার বরফ পড়েছে, তাও অল্প সময়ের জন্য।

ড. ব্র্যাডলির মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি। তিনি বলেন, “যেখানে ঘন বরফের আবহাওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল, সেখানে আমরা দাঁড়ালাম সবুজ ভূমির পাশে, খালি হাতে বৃষ্টিতে ভিজে।”

গবেষণা দলের সদস্য লরা মোলারেস মনকায়ো বলেন, উষ্ণ এই আবহাওয়া শুধু তাদের গবেষণাকেই বাধাগ্রস্ত করেনি, বরং নিরাপত্তার ঝুঁটিও বাড়িয়ে দিয়েছে। বরফ গলে যাওয়ায় স্নোমোবিল ব্যবহার করতে না পারায় পোলার বিয়ারের মতো হিংস্র বন্যপ্রাণীর অঞ্চলে চলাফেরার জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হয়।

এই বরফ গলে যাওয়ার ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা 'আর্কটিক অ্যামপ্লিফিকেশন' বলে বর্ণনা করছেন, যার অর্থ পৃথিবীর অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেক দ্রুত হারে আর্কটিক উত্তপ্ত হচ্ছে। গবেষকরা কিছু পরিবর্তনের আশঙ্কা করেছিলেন বটে, কিন্তু বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা সময়েও এ রকম উষ্ণ আবহাওয়া দেখতে হবে, তা ভাবেননি।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়ে গবেষকরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের প্রভাব শুধু গবেষণার জন্যই নয়, বরং আর্কটিক অঞ্চলের সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের জন্যই ভয়ংকর। শীতকালে উষ্ণতার কারণে বন্যপ্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে, বরফ গলে যাওয়া পার্মাফ্রস্ট থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন আরও জটিল হয়ে উঠছে।

তারা সতর্ক করে বলেছেন, আর্কটিকের শীতকালীন আবহাওয়া নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, কারণ বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এই সময়টিকে এখনও সবচেয়ে কম বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অথচ জলবায়ুর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এখন এই সময়েই হচ্ছে।

গবেষকরা বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এসব পরিবর্তনের প্রভাব দেখেই থেমে থাকা যাবে না, বরং আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, আর্কটিকের শীতে যে অস্বাভাবিক উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে, তা আর কোনো ভবিষ্যৎ আশঙ্কা নয়—এটি এখনকারই বাস্তবতা। এবং এই বাস্তবতা বদলে দিচ্ছে গবেষণা, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষের বসবাসের ধরন।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ