সাবেক আইজিপি জানালেন টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের গুমের নেপথ্য

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১২:১২:৩৩
সাবেক আইজিপি জানালেন টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের গুমের নেপথ্য

ব্যারিস্টার আরমানের গুম এবং টিএফআই সেলে বন্দি থাকার বিষয়ে একটি বিস্ফোরক ও চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। এই জবানবন্দিতে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, গুম, খুন বা কাউকে গোপনে তুলে নেওয়ার কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকি। এমনকি পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থেকেও এসব অপারেশনের অনেক কিছু তার অজানা থাকত।

চৌধুরী মামুন বলেন, কাউকে তুলে আনা বা গুম করে রাখার বিষয়গুলো সরাসরি বাস্তবায়ন হতো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, যার নির্দেশনা দিতেন জেনারেল তারিক সিদ্দিকি। ব্যারিস্টার আরমান যে টিএফআই সেলে বন্দি আছেন, তা তিনি স্বীকার করেন, তবে জানান যে, তাকে তার (মামুনের) সময়ে তুলে আনা হয়নি। বরং তার আগেই এই অপারেশন পরিচালিত হয়। মামুন বলেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ দায়িত্ব হস্তান্তরকালে তাকে জানিয়ে যান যে ব্যারিস্টার আরমান টিএফআই সেলে বন্দি অবস্থায় আছেন। পরে বিষয়টি আরও নিশ্চিত করেন র‌্যাবের এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেশন) ও ডিরেক্টর (ইন্টেলিজেন্স) সরওয়ার বিন কাশেম।

সাবেক আইজিপি জানান, এই গুমের সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেই এসেছিল এবং টিএফআই সেলে আটকে রাখার সিদ্ধান্তও ছিল সরকারেরই। এরপর তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকিকে জানালে তিনি কেবল বলেন, “ঠিক আছে, রাখেন, পরে বলব।” কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যাখ্যা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে মামুন দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় পরবর্তী ডিজি খুরশিদ হোসেনকে আরমানের বিষয়টি অবহিত করেন।

জবানবন্দিতে মামুন আরও জানান, র‌্যাবের দায়িত্বে থাকাকালে তার অধীনে যারা ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর ছিলেন তারা হলেন- সারওয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। টিএফআই সেলে কাকে বন্দি রাখা হতো, নির্যাতন হতো কিংবা কেউ ক্রসফায়ারে নিহত হতো – এসব তথ্যের কিছু কিছু তিনি জানতেন, কিন্তু কখনো তদন্ত করেননি বা কোনো ব্যবস্থা নেননি। কারণ এসব সিদ্ধান্ত আসত মূলত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও সামরিক উপদেষ্টার দপ্তর থেকে, এবং পুলিশ প্রধান হয়েও তিনি অনেক সময় অবহিত থাকতেন না।

তিনি বলেন, র‌্যাবের অধিকাংশ অভিযান পরিচালিত হতো গোয়েন্দা তথ্য ও নির্দেশনার ভিত্তিতে এবং এসব বিষয়ে আইজিপিকে অবহিত করা হতো না। মামুন আরও উল্লেখ করেন, র‌্যাবের একজন কুখ্যাত কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন গুমসহ নানা অপারেশনে দক্ষতার কারণে সংস্থার ভেতরে জনপ্রিয় ছিলেন। নির্যাতনের ঘটনায় র‌্যাবের অধিকাংশ জড়িত কর্মকর্তা ছিলেন মিলিটারি ব্যাকগ্রাউন্ডের। আর এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত আসত প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকির দপ্তর থেকে।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ