ওয়াশিংটন বৈঠকে আশার আলো: শুল্ক হ্রাসে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১১:৪৭:০০
ওয়াশিংটন বৈঠকে আশার আলো: শুল্ক হ্রাসে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক বার্তা পেয়েছে। পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে দেশটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিশ্চিত করেছেন, আলোচনার শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (USTR) কর্মকর্তারা বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে নীতিগত সম্মতির আভাস দিয়েছেন।

মাহবুবুর রহমান জানান, ২৯ জুলাই মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের শুল্ক হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমতে পারে, যদিও সুনির্দিষ্ট হার এখনই বলা সম্ভব নয়। আজ ও আগামীকাল আরও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে, যা আমাদের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করবে। তবে সামগ্রিকভাবে আমরা আশাবাদী।”

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরাও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আলোচনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, যিনি দেশটির বাণিজ্য ও শুল্ক নীতির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এবং বর্তমান সংকট নিরসনে কার্যকর সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। বর্তমান শুল্কহার গড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ হলেও, নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা ব্যাপকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২ এপ্রিল একটি নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা করেছিল, যেখানে বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়। যদিও পরে ৯ এপ্রিল সেটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয় এবং ৮ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন পুনরায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, দেশটির পণ্য আমদানিতে আগ্রহী এবং পাল্টা শুল্ক কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক ছাড় দিতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে লক্ষ্য হলো, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা ও শুল্ক হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অন্যান্য এশীয় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক নির্ধারণে সমঝোতা হয়েছে। বাংলাদেশও যাতে এই সীমার মধ্যে একটি হার পায়, সেটিই আলোচনায় বাংলাদেশের কৌশলগত অগ্রাধিকার।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ