ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পথে যুক্তরাজ্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ০৯:৪২:৫৯
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পথে যুক্তরাজ্য

ইসরাইলের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরাইল যদি চলমান গাজা সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় মানবিক ও কূটনৈতিক শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। সোমবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় সময় এক জরুরি ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই যুক্তরাজ্য এই নীতি গ্রহণ করেছে।

স্টারমার তার বক্তব্যে বলেন, গাজায় শিশুদের অপুষ্টির করুণ চিত্র এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই সংকট আমাদের চোখের সামনে ইতিহাস হয়ে উঠছে। যুক্তরাজ্য আর নিরব থাকতে পারে না।” তিনি ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে যেতে হবে, জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দিতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তির লক্ষ্যে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। এসব শর্ত পূরণ না হলে যুক্তরাজ্য জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে তিনি স্পষ্ট জানান।

তবে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরেই দেখা দিয়েছে তীব্র মতবিরোধ। স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ও জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড। তাদের মতে, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া একটি নৈতিক দায় এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাজ্যের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।

অন্যদিকে চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস, প্রযুক্তিমন্ত্রী পিটার কাইলসহ লেবার পার্টির ইসরাইলপন্থী অংশ এই সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই স্বীকৃতি হামাসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরোক্ষভাবে ‘পুরস্কৃত’ করার সমান হবে এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জি৭ গোষ্ঠীর মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম দেশ যারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাজ্য যদি সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হবে এবং ইসরাইলের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।

স্টারমার বলেন, “দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করে এসেছি, কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে – আদৌ সেই সমাধান সম্ভব কি না? যদি আজ স্বীকৃতি না দিই, ভবিষ্যতে হয়তো স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কোনো ফিলিস্তিন আর থাকবে না।” তিনি এও বলেন, “এটি শুধু লেবার পার্টির নীতি নয়, এটি সময়ের দাবি। প্রতিদিন গাজায় যা ঘটছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এখন আমাদের কাজ নীরবতা ভাঙা।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ