নতুন যে পদ্ধতিতে হবে ডলারের মূল্য নির্ধারণ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৫ ০৮:১৭:২৭
নতুন যে পদ্ধতিতে হবে ডলারের মূল্য নির্ধারণ

সত্য নিউজ: বহুল প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্তে পৌঁছে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে বাজারচালিত ডলার বিনিময় হার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার (১৪ মে) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন। তিনি দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গভর্নর বলেন, “ডলার রেট বাজারভিত্তিক করার জন্য আমরা যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করেছি। এখন সেই সময় এসেছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ডলার যেকোনো দামে কিনতে হবে। বাজারে যথেষ্ট ডলারের সরবরাহ রয়েছে, তাই মূল্য বিদ্যমান হার থেকে খুব একটা বিচ্যুতি ঘটবে না।”

ক্রলিং পেগের অবসান: একটি কাঠামোগত পরিবর্তন

বর্তমানে বাংলাদেশে ডলারের বিনিময় হার “ক্রলিং পেগ” পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সীমিত পরিসরে হারের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে নতুন ব্যবস্থায় বাজারের যোগান ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিনিময় হার নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতির গতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্বচ্ছতা আনতে একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা করছে।

স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় নজরদারি

যদিও বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তবু বড় অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেনে প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে বলে আশ্বাস দেন গভর্নর। তার ভাষায়, “আমরা পুরোপুরি উদাসীন থাকব না। প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকব, যাতে বিনিময় হার অস্থিতিশীল না হয়।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আর্থিক সহায়তা

ড. আহসান আরও জানান, আইএমএফের সঙ্গে চলমান আলোচনার ভিত্তিতে জুন মাসের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আইএমএফসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পাবে। এর মধ্যে আইএমএফ এককভাবে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।

২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের আওতায় ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। বিনিময় হারে নমনীয়তা নিয়ে আগের মতপার্থক্য থাকার কারণে সাম্প্রতিক কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব ঘটেছিল। তবে সর্বশেষ নীতিগত সমঝোতার মধ্য দিয়ে সেই জটিলতা অবসানের দিকে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারীদের জন্য প্রণোদনা বাড়বে, একইসঙ্গে আমদানিকারকদের জন্য খরচ সামান্য বাড়লেও সামগ্রিকভাবে মুদ্রাবাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরবে। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাকেও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ