ঋণচক্রের ঘূর্ণিপাকে বাংলাদেশ? শোধ বেড়েছে, ঋণ বিতরণ কমেছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৯ ১১:৩৯:৫৭
ঋণচক্রের ঘূর্ণিপাকে বাংলাদেশ? শোধ বেড়েছে, ঋণ বিতরণ কমেছে
ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা বৈদেশিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে মূলধন ও সুদ মিলিয়ে মোট ৪.০৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় এই পরিমাণ ২১.২ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩.৩৭২ বিলিয়ন ডলার।

ইআরডির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনের পরিশোধ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫৯৫ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের অর্থবছরের ২.০২ বিলিয়নের তুলনায় প্রায় ২৮.৮ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে সুদ পরিশোধও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৯১ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছরের সুদের পরিমাণ ছিল ১.৩৪৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, সুদ পরিশোধে ১০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত এক দশকে নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তাভিত্তিক বিদেশি ঋণের ‘গ্রেস পিরিয়ড’ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধের গতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক দায় মেটানোর ক্ষেত্রে আরও কঠোর ব্যয় ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হতে পারে।

একদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লেও অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন বৈদেশিক ঋণ চুক্তি ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মোট ৮.৩২৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে, যেখানে আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এই পরিমাণ ছিল ১০.৭৩৯ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে ঋণ বিতরণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৫৬৮ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ১০.২৮৩ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ প্রতিশ্রুতির দিক থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শীর্ষে ছিল বিশ্বব্যাংক, যারা বাংলাদেশকে ২.৮৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দেয়, এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার ছিল বাজেট সহায়তা। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন বাজেট সহায়তা অন্তর্ভুক্ত। জাপান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১.৮৯ বিলিয়ন ডলার এবং এআইআইবি (Asian Infrastructure Investment Bank) দিয়েছে ৫৬১ মিলিয়ন ডলার।

ঋণ বিতরণের দিক থেকেও এডিবি ছিল সবার শীর্ষে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তারা ২.৫২ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বিশ্বব্যাংক (২.০১২ বিলিয়ন ডলার), এরপর জাপান (১.৫৮ বিলিয়ন ডলার), রাশিয়া (৬৭৫ মিলিয়ন ডলার), এআইআইবি (৫২৭ মিলিয়ন ডলার), চীন (৪১৫ মিলিয়ন ডলার) এবং ভারত (১৮৫ মিলিয়ন ডলার)।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ