জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংকট

উত্তাল কাকরাইল: পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী-শিক্ষক একমঞ্চে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৪ ২২:৪১:১৮
উত্তাল কাকরাইল: পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী-শিক্ষক একমঞ্চে

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিক্ষোভ। আজ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে করে আরও কয়েক শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বিক্ষোভস্থলে এসে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন নিজে উপস্থিত ছিলেন — যা আন্দোলনের গুরুত্ব এবং একাত্মতাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করে।

এর আগে দুপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে বিকেল দুইটার দিকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আবার কাকরাইল মোড়ে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকার যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে বিকেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে যোগ দেন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা এক কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন।

পুলিশি হামলার তীব্র প্রতিবাদ, বিচার দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ লংমার্চে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর পেছনে দায়ীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তাঁরা ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনারের (এসি) শাস্তির দাবিও তুলেছেন।

আন্দোলনে আহত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দিন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বর্বর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা একচুলও সরব না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক অভিযোগ করেন, “শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশের অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। সহকারী প্রক্টরও পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব।”

উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যমুনায়, অবস্থান চলছে

বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পৌঁছায়। রাত আটটা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। আন্দোলনকারীরা এই আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন।

দাবি কি কি?

আবাসন সংকট, বাজেট ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ইস্যুতে আন্দোলনশিক্ষার্থীরা জানায়, তাঁদের আন্দোলনের মূল দাবি তিনটি—১. ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করা,২. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন করা,৩. দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা।

এই দাবিগুলোকে সামনে রেখে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ভাস্কর্য চত্বর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লংমার্চ শুরু করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নেন।

পুলিশের বাধা, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান — থামেনি আন্দোলন

লংমার্চটি কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় লাঠিচার্জ। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু আন্দোলন থামেনি। ঘণ্টাখানেক পর আবারও শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে এসে অবস্থান নেন।

ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “এখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”

আহত শিক্ষার্থীদের প্রত্যাবর্তন, মনোবল অটুট

লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়েছেন জবি’র অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৩৬ জন ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বিকেলেই আবার আন্দোলনে যোগ দেন।

গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, “ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছিল, কিন্তু মন টানেনি। দাবি আদায়ের জন্য আবারও সহপাঠীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।”

আরেক শিক্ষার্থী মুনতাসির নাদিব সংগ্রাম বলেন, “হাতে চোট পেয়েছি, তবুও হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা যায় না যখন সহপাঠীরা রাজপথে।”

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন জানান, “চোখে গ্যাসের শেল লেগেছে, কিন্তু আন্দোলনের পাশে থাকার তাগিদে আবারও ফিরেছি।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ