প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের জন্য নতুন যুগের সূচনা

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৯ ১০:৩৩:২৫
প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের জন্য নতুন যুগের সূচনা
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশের প্রায় ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ের জন্য এই সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে দেখছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মতে, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত এই পদক্ষেপ প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং তাদের পেশাগত মর্যাদা সুসংহত করবে।

এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিক শিক্ষক মহলে স্বস্তি নেমে এসেছে। তারা সরকারের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, এটি তাদের আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে তারা আরও কিছু দাবি বাস্তবায়নের তাগিদ দিচ্ছেন, বিশেষ করে সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড নিশ্চিত করা, জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে চাকরি করলে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির সুযোগ।

বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫০২টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন ৩১ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের কেউ ১২তম, কেউ ১১তম, আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যে ৮ম, ৯ম ও ১০ম গ্রেডে রয়েছেন।

১২তম গ্রেডে থাকা প্রধান শিক্ষকরা এখন দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার ফলে তাদের মূল বেতন গড়ে ৪ হাজার ৭০০ টাকা বাড়ছে। বাড়িভাড়া ভাতা গড়ে ১ হাজার ৬৩৫ টাকা বাড়ছে, উৎসব ভাতা বাড়ছে ৪ হাজার ৭০০ টাকা, বিশেষ ভাতা ৭০৫ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা ৯৪০ টাকা বাড়বে।

এই ক্যাটাগরির মাত্র ১ হাজার ১৫৪ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য সরকারের বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।

১১তম গ্রেডে থাকা প্রধান শিক্ষক যারা এবার দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন, তাদের সংখ্যাও বড়—১৩ হাজার ৮৫৪ জন। এদের মূল বেতন গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়বে। বাড়িভাড়া ১ হাজার ৯৫ টাকা, উৎসব ভাতা ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বিশেষ ভাতা ৫২৫ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা ৭০০ টাকা করে বাড়বে।

এই গ্রুপের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা।

এদিকে যেসব প্রধান শিক্ষক ইতিমধ্যেই উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, যেমন অষ্টম বা নবম গ্রেড, তাদের ক্ষেত্রে এই নতুন সিদ্ধান্তের প্রভাব নেই। তারা আগের মতোই তাদের গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পেতে থাকবেন।

এই মুহূর্তে প্রধান শিক্ষক পদের ৩৪ হাজার ১০৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৪৫৯টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের পরিকল্পনা রয়েছে। এদের সবাই বর্তমানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১১তম গ্রেডে বেতন পান। পদোন্নতি পেয়ে তারা দশম গ্রেডে এলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ২১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ রয়েছে ২ হাজার ৬৪৭টি। এসব পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা পূর্বে ১২তম গ্রেডে বেতন পেতেন। এখন তারা সরাসরি দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

মোট ব্যয় হিসাব করলে দেখা যায়, কর্মরত প্রধান শিক্ষক, পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদ এবং সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ মিলিয়ে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেন। এরপর শিক্ষকরা সমবেত হয়ে সব প্রধান শিক্ষকের জন্য একই সুবিধা দাবি করেন এবং রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বড় ধরনের শিক্ষক সমাবেশ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে একটি সুসংহত প্রস্তাব তৈরি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় এর অনুমোদন দেয় এবং তা বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে শিক্ষকদের পেশাগত উদ্দীপনা বাড়বে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তারা আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।"

এছাড়াও মন্ত্রণালয় একে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার মাধ্যমে সরকার তার দায়বদ্ধতা ও সম্মান প্রদর্শন করেছে।”

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, “প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করায় আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমাদের আরও দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ, জ্যেষ্ঠদের শতভাগ পদোন্নতি এবং চাকরির বয়স বিবেচনায় উচ্চতর গ্রেডের বিষয়টি আমরা সরকারকে সময়সীমা বেঁধে জানিয়ে দিয়েছি।”

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, “শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অধিদপ্তরও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছে। এবার উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে প্রস্তাব তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দিয়েছে।”

-রফিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ