নির্বাচনের বল এখন রাজনীতির কোর্টে: বদিউল আলম মজুমদার

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৪ ০৮:৩৫:৫৩
নির্বাচনের বল এখন রাজনীতির কোর্টে: বদিউল আলম মজুমদার

সত্য নিউজ:বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিশিষ্ট নির্বাচন বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন হলে এ বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। তবে তার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছানো।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বল এখন মূলত রাজনৈতিক দলের কোর্টে।” তাঁর মতে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্বচ্ছতা ও আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের অংশ হিসেবে গঠিত হয় ১১টি সংস্কার কমিশন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তার সুপারিশ সরকারকে জমা দিয়েছে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।

বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার মূল সমস্যা ‘আস্থাহীনতা’। তিনি বলেন “আমাদের ভোট ব্যবস্থাটাই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জালিয়াতি, প্রভাব খাটানো, প্রশাসনের দলীয়করণ সব মিলিয়ে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।” এই আস্থার সংকট দূর করতে হলে নির্বাচন কমিশনের কাঠামোগত শক্তিশালীকরণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২4 সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে আয়োজন করা হতে পারে। যদিও বিএনপিসহ কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি ডিসেম্বরের মধ্যেই চায়।

বদিউল আলমের মতে মূল সমস্যার গভীরে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতার অভাব। যদিও নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন তবুও বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন “নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও তার কার্যকারিতা নির্ভর করে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা ও সহযোগিতার ওপর।”

তিনি আরও বলেন “সবচেয়ে শক্তিশালী কমিশনও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না, যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ আচরণ না করে। এই কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা সামনে আসে।”

ইসি গঠনে বর্তমান ‘সার্চ কমিটি’ পদ্ধতিকেও তিনি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দেন। তার ভাষায় “সরকারের অনুগত, পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে ভালো মানুষ, কিন্তু তারা নিরপেক্ষ ছিলেন না, তাদের মেরুদণ্ড ছিল না।”

ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য বদিউল আলম জোর দেন একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার এবং দলীয়করণমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর। তিনি বলেন “যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত না হয়, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারে, তাহলে নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।”

সবশেষে তিনি মনে করিয়ে দেন যে কোনও সংস্কার তখনই কার্যকর হবে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রকৃত সদিচ্ছা থাকবে এবং তারা জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাবে। সেই ঐকমত্যই বাংলাদেশকে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে এগিয়ে নিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ