“দেশবাসী সেনাপ্রধানের দিকে তাকিয়ে” — জাতীয় পার্টির হুঁশিয়ারি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৪:৪৬:১০
“দেশবাসী সেনাপ্রধানের দিকে তাকিয়ে” — জাতীয় পার্টির হুঁশিয়ারি

দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় পার্টি (রওশন)। দলটি বলছে, আইনশৃঙ্খলার এই ক্রমাবনতির ফলে শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে দলটি সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে সারাদেশে কার্যকর অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ এবং ভূমি দখলের মতো অপরাধ ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং নিজের জীবন ও সম্পদ রক্ষার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, প্রয়োজন একটি কার্যকর জাতীয় ঐক্য। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বুদ্ধিজীবী সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন এবং ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। জাতীয় পার্টি মনে করে, এখন যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চলে এসেছে, যার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি গুরুত্বপূর্ণ। দলটি বলছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ডিসেম্বরের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের। তিনি নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘অকার্যকর, সিদ্ধান্তহীন ও উদাসীন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, সরকারের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শক্তিগুলো অতীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভূমিকা রেখেছিল। এখন তারাই নতুন করে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ককেও দেশের জন্য 'অশনিসংকেত' হিসেবে তুলে ধরেন মামুনুর রশিদ। তিনি অভিযোগ করেন, দেশে গত ১১ মাসে কোনো বৈদেশিক বিনিয়োগ আসেনি, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। যদিও উপস্থিত সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তখন মামুনুর রশিদ বলেন, সেটি প্রকৃত বিনিয়োগ নয়, বরং প্রবাসী রেমিট্যান্সের অংশ হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, “আজ দেশের মানুষ আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। আপনি যদি উদ্যোগ না নেন, তাহলে জাতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুর রহমান, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সৈয়দ ওয়াহেদুল ইসলাম এবং হাফসা সুলতানাসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই একমত হয়ে বলেন, এখনই সময় জাতীয় সংকট মোকাবিলায় সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ