১৪ জুলাই ছাত্রদলের পাল্টা বিক্ষোভ

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যা করার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলেছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা দাবি জানান দ্রুত বিচার, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। তবে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ছাত্রদল দাবি করছে, এই বিক্ষোভের পেছনে রয়েছে একটি ‘গোপন তৎপরতায় অভ্যস্ত’ সংগঠনের সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা, যার লক্ষ্য হলো শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো। তারা অভিযোগ করে বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আবেগকে ব্যবহার করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। এর প্রতিবাদে ছাত্রদল রাজপথে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শনিবার (১২ জুলাই) ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যৌথভাবে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, আগামী ১৪ জুলাই (সোমবার) বিকেল ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন দেশের সকল জেলা ও মহানগরীতেও একযোগে ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে অশান্ত করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাই এসব গোপন তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছে সংগঠনটি। ছাত্রদল তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান জানাতে চায়।

সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, “আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে জ্ঞানচর্চা ও স্বাধীন মত প্রকাশের কেন্দ্র। এটিকে বিশৃঙ্খলা ও গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডার পরীক্ষাগারে পরিণত করার অপচেষ্টা আমরা প্রতিহত করব। দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজ কখনোই এ ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।” তারা আরো জানান, দেশের বাস্তব সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই একটি মহল শিক্ষার্থীদের ইস্যু ব্যবহার করে কৃত্রিম আন্দোলন গড়ে তুলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পাল্টা প্রতিক্রিয়া রাজনীতিতে নতুন এক মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় রয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের তৎপরতা একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সেখানে ছাত্রদলের মতো রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

লাল চাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি হলেও, সেটিকে ঘিরে যেভাবে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তা উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে, ছাত্র সংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন বাড়িয়ে দিতে পারে।

ছাত্রদল বলছে, তারা সংঘাত নয়, বরং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে চায়। তবে এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সামনে দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক