জমি নিয়ে বিরোধ, ১৫ বছরের ছাত্র রমজানের বিরুদ্ধে  ধর্ষণচেষ্টা মামলা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ২০:৪৪:১৬
জমি নিয়ে বিরোধ, ১৫ বছরের ছাত্র রমজানের বিরুদ্ধে  ধর্ষণচেষ্টা মামলা

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মাত্র ১৫ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করছে, এটি সম্পূর্ণ সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, যার কোনো ভিত্তি নেই। স্থানীয়রাও বলছেন, এই অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং দীর্ঘদিনের জমি দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিহিংসার অংশ হিসেবেই কিশোর রমজানকে (রাব্বি) টার্গেট করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুকরা গ্রামে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া রমজান মোল্লা ওই গ্রামের বাসিন্দা রবিউল মোল্লার ছেলে। পরিবার জানায়, প্রতিবেশী আনিছ মোল্লার সঙ্গে তাদের প্রায় আট মাস ধরে সাড়ে চার শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত ৮ জুলাই ডিশ লাইনের তার ওই জমির ওপর দিয়ে টানাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পরদিন আবার বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয় দুই পরিবারের মধ্যে।

এরপর ১১ জুলাই আনিছ মোল্লার স্ত্রী তানিয়া বেগম থানায় অভিযোগ করেন যে, রমজান তাদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। রবিউল মোল্লার অভিযোগ, কোনো তদন্ত ছাড়াই ওই দিন দুপুরে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। একই দিন মামলা দায়ের করে পরদিন রমজানকে কিশোর আদালতের মাধ্যমে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ও বাদীর প্রতিবেশী বেলি বেগম বলেন, "আমি এই মামলার কিছুই জানি না। কবে ঘটনা ঘটেছে, মামলায় আমার নাম কীভাবে এসেছে—তা-ও জানি না।"

এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ধর্ষণ বা এমন কোনো চেষ্টার ঘটনা ঘটেনি। দীর্ঘদিনের জমি বিরোধের সূত্র ধরে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। তারা মনে করেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত রমজানের পরিবার, বিশেষ করে তার বাবা রবিউল মোল্লা, বলছেন—একটি মিথ্যা মামলায় ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়ে তার শিক্ষাজীবন ও মানসিক অবস্থার চরম ক্ষতি করা হয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে সমাজেও সে কলঙ্কের বোঝা বয়ে বেড়াবে।

এদিকে, মামলার বাদী তানিয়া বেগমের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেটি রিসিভ করেন তার স্বামী আনিছ মোল্লা। তিনি সোজাসাপ্টা বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এলাকাবাসী যা বলছে, আপনি তা-ই লিখুন। প্রয়োজন হলে থানায় যান।”

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, "অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণ হয় এটি মিথ্যা, তাহলে মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।"

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—কোনো শিশুকে নিয়ে এমন গুরুতর অভিযোগ কতটা যাচাই করে মামলা নেওয়া হলো? একজন কিশোরকে তদন্ত ছাড়াই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া আদৌ কতটা ন্যায়সংগত ছিল?

এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের প্রশ্ন যেমন সামনে এসেছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে আমাদের পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়া ও বিচারব্যবস্থার যথার্থতা নিয়েও। একটি কিশোরের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন খেলা কতটা মেনে নেওয়া যায়—তা এখন সমাজের বিবেকের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ