প্রবাসী আলী আহমেদের মুক্তি ও সংগ্রামের গল্প

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৪:৩২:৩৫
প্রবাসী আলী আহমেদের মুক্তি ও সংগ্রামের গল্প

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালী গ্রামের প্রবাসী আলী আহমেদ দুলাল জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজন করায় তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। দেশে তখন রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ নিহত হচ্ছিল, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা ছিল অপ্রতুল, আর ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় প্রবাসে থেকেও নিশ্চুপ থাকেননি আলী আহমেদ। তিনি ১৯ জুলাই আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

এই প্রতিবাদের পরপরই শুরু হয় দমন-পীড়ন। আলী আহমেদের অভিযোগ, আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা বি এম জামাল তাদের ‘জঙ্গি ও উগ্রবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে স্থানীয় প্রশাসনকে প্ররোচিত করেন। এরপর আমিরাত কর্তৃপক্ষ আলী আহমেদসহ ৫৭ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে অনেকেই ১০ বা ১১ বছরের কারাদণ্ড পান, আর আলী আহমেদসহ কয়েকজনের দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আলী আহমেদ জানান, তাকে চোখ বেঁধে, হাতে হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। তাকে কখনো মৃত্যুর হুমকি, আবার কখনো কালেমা শাহাদাত পড়ে নিতে বলা হতো। প্রায় আড়াই মাস তিনি বাইরের জগত থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলেন। দেশে ফেরার সময়ও বাধার মুখে পড়েন তিনি। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দেশে ফেরার চেষ্টাকালে ইমিগ্রেশনে তাকে ফের আটক করা হয়। তার দাবি, ফেরার সময় তার সঙ্গে থাকা ৬০ কেজি মালপত্র, এক ভরি সোনা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেরত পাননি।

শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আলী আহমেদ জানান, তার মতো আরও ১৮৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও এখনও অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন, যাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

আলী আহমেদের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, “চার মাস ধরে আমার স্বামী কোথায় আছেন, কোনো খবর জানতাম না। ফোন বন্ধ। সন্তানের মুখ চেয়ে শুধু কাঁদতাম।” এখন তিনি ফিরে এলেও নিঃস্ব হয়ে এসেছেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে ভেঙে দিলেও, তার সাহস ও ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা তাকে একটি দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন, যাতে তিনি নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন।

আলী আহমেদের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আর নিরব নয়। কিন্তু এই সাহসী অভিব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থন না দিলে প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। রাষ্ট্রের উচিত তাদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, কূটনৈতিকভাবে সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ