ইরানের ছায়াতেই হুথিদের হামলা? যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অভিযোগ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৪:০৪:০৩
ইরানের ছায়াতেই হুথিদের হামলা? যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অভিযোগ

লোহিত সাগরে হুথি বিদ্রোহীদের নতুন হামলায় একটি বাণিজ্যিক কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এতে অন্তত তিনজন নাবিক নিহত হয়েছেন এবং ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও নৌকা দিয়ে হামলা চালিয়েছে হুথিরা, যার মধ্যে চারটি জাহাজ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনায় সাতজনের বেশি নাবিক প্রাণ হারিয়েছেন, একটি জাহাজ দখল করে নেওয়া হয়েছে।

এই আক্রমণগুলো মূলত ইসরায়েলবিরোধী ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ বা Axis of Resistance-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। হুথি বিদ্রোহীরা ইরান-সমর্থিত একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী, যারা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হুথিদের এই হামলায় সরাসরি ইরানের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহায়তা রয়েছে। যদিও ইরান তা অস্বীকার করে বলেছে, তারা কেবল রাজনৈতিকভাবে হুথিদের সমর্থন জানায়। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের সাহায্য ছাড়া এই ধরনের সমন্বিত ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হামলা সম্ভব নয়।

২০২৫ সালের জুনে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় একটি অতর্কিত বিমান হামলা চালায়, যার জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। এই সংঘাতে ১২ দিনের যুদ্ধে উভয় পক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিস্তৃত যুদ্ধের পথ প্রশস্ত করেছে।

এদিকে, হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েল। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে হুথি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের কিছু এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যারা আমাদের আঘাত করতে চায়, তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে। যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাত তুলবে, তাদের সেই হাত কেটে ফেলা হবে।”

হুথিদের সামরিক সক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট পয়েন্ট কমব্যাটিং টেরোরিজম সেন্টার জানায়, হিজবুল্লাহর কাছ থেকেও হুথিরা সামরিক প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহায়তা পাচ্ছে। এমনকি ইরান ইয়েমেনে ড্রোন তৈরির কারখানা গড়ে তুলতে হুথিদের সহায়তা করেছে বলে ধারণা করছে ইটালিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল স্টাডিজ।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. এলিজাবেথ কেন্ডাল মনে করেন, হুথিদের এমন প্রযুক্তিনির্ভর এবং ঘনঘন হামলা চালানোর পেছনে ইরানি সহায়তা থাকাটা সন্দেহাতীত। যদিও তিনি এটাও বলেন যে, হুথিদের ওপর ইরানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে, তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে হুথিরা ইসরায়েলবিরোধী কার্যক্রমে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। আর এতে করে লোহিত সাগর, হরমুজ প্রণালী ও মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রপথগুলোতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি হুথিদের আক্রমণ বন্ধ করতে না পারা যায়, তবে তা বিশ্ব বাণিজ্য ও জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে ইয়েমেন, লেবানন, ইরান ও ইসরায়েল সব পক্ষকে নিয়ে গঠিত এক জটিল সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সমাধান ও আঞ্চলিক সংহতি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ