নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমানের কড়া বার্তা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় রাজনীতির অস্থির প্রেক্ষাপটে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "অদৃশ্য শক্তি আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে" এবং এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থতা এলে বিএনপির দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, “আমি আজ থেকে সাত-আট মাস আগে বলেছিলাম আমাদেরকে অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। আজ সেই কথার সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে। যেসব শক্তি আগে আড়ালে ছিল, আজ তারা একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে।” তার এই মন্তব্যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পেছনে চলমান নানা গোপন চাপ, ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতের ইঙ্গিত মিলেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তিনি দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলার অভাব এবং জনবিচ্ছিন্ন আচরণে জড়িয়ে পড়া নেতাদের সম্পর্কে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তারেক বলেন, “যদি আমাদের নিজস্ব দলেই কেউ এমন কাজ করে, যা জনসমর্থনযোগ্য নয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদেরকে দলের বাইরে রাখতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “দলের ঐক্য রক্ষা করতে হলে অনৈতিক ও জনবিচ্ছিন্ন কার্যকলাপ বরদাশত করা যাবে না।”

বিএনপির ৩১ দফাভিত্তিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “আমরা যদি নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আর এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে না পারলে, গত ১৫ বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ, নির্যাতন সব বৃথা যাবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলীয় আন্দোলনকে কেবল রাজনৈতিক দাবিতে সীমাবদ্ধ না রেখে তা গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের লড়াই হিসেবে তুলে ধরেন।

তারেক রহমান বার্তায় দলের ভেতরে ‘শুদ্ধি’ আনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। বলেন, “ঐক্যই হবে আমাদের শক্তি। নেতৃত্বে শুদ্ধি আনতে হবে, দলের ভেতর যারা বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন বা শৃঙ্খলাভঙ্গ করে, তাদের সঙ্গে আপস করলে চলবে না।” এই বার্তার মাধ্যমে তিনি মাঠপর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এবারের বার্তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন আন্দোলন নতুন গতি ও কাঠামো খুঁজছে। একদিকে সরকার পতনের দাবিতে জোরালো কর্মসূচি দেওয়ার চাপ, অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত ব্যক্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের নিয়ে ক্ষোভ তীব্রতর হয়েছে। বিশেষ করে “জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন”-পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব, কৌশল এবং ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন পর্যায়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য দলীয় ভিতকে শক্তিশালী করতে পারে যদি তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারেক রহমানের অবস্থান কঠোর ও দৃঢ় থাকে। কারণ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এইরকম স্পষ্ট ভাষা শুধু বার্তা নয়, এটা মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত বলেও ধরা হচ্ছে। তার বার্তা স্পষ্ট করেছে, আন্দোলনের সফলতার জন্য দলীয় ঐক্য, নীতি ও শৃঙ্খলার প্রশ্নে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক