"মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই", চালবাজারে অভিযান

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ০৯:৩১:০১
"মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই", চালবাজারে অভিযান

বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও চালের বাজার অস্থির। দাম বেড়ে গেছে হঠাৎ করেই কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত, যার ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার দেশে চালবাজারে নজরদারি ও অভিযান জোরদার করেছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন একযোগে বাজারে অভিযান শুরু করেছে, যার ফলে ইতোমধ্যে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১০ লাখ ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে কিছু অবৈধ মজুতের গুদামও।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানান, মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই। এটি একটি ভোক্তা বিভ্রান্তিকর বানানো নাম। এই চালের নামে বাজারজাতকরণ প্রতারণার শামিল। ফলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে বাজার অস্থিরতার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে একটি শক্তিশালী করপোরেট সিন্ডিকেটকে, যারা দেশের ধান-চাল উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতকরণের পুরো চেইন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অটো রাইস মিল এবং বৃহৎ চাল উৎপাদক ও আমদানিকারকদের একচেটিয়া দখলের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা হ্রাস পেয়েছে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৪৪টি জেলায় চালানো অভিযানে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত। শুধু ঢাকাতেই ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। এছাড়া বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ চালের প্রধান উৎপাদনকারী অঞ্চলে অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার স্বীকার করেন যে চালের দাম বেড়েছে এবং তা যেন আরও না বাড়ে, সে লক্ষ্যে সরকার নজরদারি বাড়াচ্ছে। তবে বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমতির দিকে এবং দেশে বোরো উৎপাদনেও রেকর্ড হয়েছে। তারপরও বাজার অস্থিরতা স্পষ্টতই কৃত্রিম সংকট এবং কারসাজির ইঙ্গিত দেয়।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, একসময় ধীরে ধীরে চালের দাম বাড়ানো হতো, এখন মৌসুমের শুরুতেই দাম একলাফে বেড়ে যায়। এটি সুপরিকল্পিত সিন্ডিকেটের কাজ। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের মানসিকতা বদলায়নি—তারা শুধু খোলস পাল্টেছে। সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে সুবিধা দিলেও সেই চাল দেশে প্রবেশ করছে না, কারণ আমদানির অনুমতি পাওয়া অধিকাংশ ব্যবসায়ীই সেই একই সিন্ডিকেটের অংশ।

তিনি অভিযোগ করেন, আগের সরকার মিনিকেট চাল নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। এখনো প্রকাশ্যেই কিছু করপোরেট কোম্পানি এই নামেই চাল বাজারজাত করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। ক্যাব নেতা আরও বলেন, সবজি ও অন্যান্য পণ্যের বাজারে যেভাবে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়, চালের বাজারে তেমনটি হয় না। এ খাতে নিয়মিত ও কার্যকর তদারকির তাগিদ দেন তিনি।

সব মিলিয়ে চালের বাজারে বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে, এটি শুধুই সরবরাহ ঘাটতির ফল নয়; বরং একটি সুসংগঠিত করপোরেট সিন্ডিকেটের কৌশলী ও নির্লজ্জ মুনাফালোভী আচরণ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের উদ্যোগের ধারাবাহিকতা এবং প্রশাসনের কার্যকর মনিটরিং ছাড়া বাজার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ