পাকিস্তান সন্ত্রাসে লিপ্ত নয়, বরং এর শিকার: বিলাওয়াল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১০:০৭:৫৪
পাকিস্তান সন্ত্রাসে লিপ্ত নয়, বরং এর শিকার: বিলাওয়াল

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি ভারতের সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ সাফভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সম্প্রতি ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক করণ থাপারকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দেশের বাইরে হামলার অনুমতি তো দেয়ই না, এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও সন্ত্রাসবাদে ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িত নয়।

বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “বিশ্বকে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। এ পর্যন্ত আমরা হারিয়েছি ৯২ হাজার মানুষের প্রাণ। শুধু ২০২৪ সালেই ১,২০০ বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন ২০০টির বেশি সন্ত্রাসী হামলায়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক নয়, বরং এটি সন্ত্রাসবাদের অন্যতম শিকার।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিলাওয়াল বলেন, “আমি নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার। আমি জানি, পেহেলগাম হামলার ভুক্তভোগীদের পরিবারের কী ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়। সেই বেদনা আমি অনেকের চেয়ে ভালোভাবে অনুভব করি।”

বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি জানান, সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান ধারাবাহিক ও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বেনজির ভুট্টো হত্যার পর প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির আমলে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে এবং পরবর্তী সরকারে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, “আমরা ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারতের উদ্বেগজনক কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এফএটিএফের কঠোর পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে গেছি, যেখানে গোপন রাখার কিছু থাকে না।”

বিলাওয়াল দাবি করেন, পাকিস্তানের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি ও সমর্থন পেয়েছে।

২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায় ভারত। সেই অভিযোগ খণ্ডন করে পাকিস্তান সরকার জানায়, তারা যেকোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজে এ বিষয়ে সরাসরি আহ্বান জানান। কিন্তু ভারত সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

ঘটনার জেরে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মে মাসে চার দিন ধরে চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন হামলা ও সীমান্তে গোলাগুলি, যা সাম্প্রতিক দশকে অন্যতম বড় ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সংঘাত সাময়িকভাবে থেমে যায়।

ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন বুনয়ানুম-মারসুস’ নামে একটি পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় টার্গেট করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।

উত্তেজনা যখন চরমে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং জানান, উভয় দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় আলোচনা হয়েছে। যদিও ভারত ট্রাম্পের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে, পাকিস্তান তার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনয়ন দেয়।

পাকিস্তান দাবি করেছে, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপেই ভারত-পাকিস্তান সাময়িকভাবে যুদ্ধ থেকে সরে আসে এবং বড় পরিসরের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়।

বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির বক্তব্য স্পষ্ট করে যে পাকিস্তান ভারতের অভিযোগগুলোকে শুধু ভিত্তিহীন বলে মনে করছে না, বরং দেশটির নিজস্ব সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার কেন্দ্রে এখন সন্ত্রাসবাদ ও এর উৎস সংক্রান্ত অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও, আন্তর্জাতিক মহলের জন্য বিষয়টি আরও গভীর: দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষের সম্ভাবনা এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়ের নিশ্চয়তা কতটা জরুরি তা এই প্রেক্ষাপটে আবারও সামনে চলে এসেছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ