বিএসএফকে ‘খুনি বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে নাহিদ ইসলামের কঠোর সমালোচনা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ০৯:২৫:০৪
বিএসএফকে ‘খুনি বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে নাহিদ ইসলামের কঠোর সমালোচনা

ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএসএফ গত এক সপ্তাহে একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ তুলে হত্যা করেছে এবং লাশ ফেরত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে গত ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, বরং একটি খুনি বাহিনী। তাদের নেশা খুন করা। বিএসএফ মানবতাবিরোধী বাহিনী। আমরা এই সীমান্ত হত্যা মেনে নেবো না। আমরা ভারত সরকারকে আহ্বান জানাই, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মর্যাদাশীল আচরণ করুন।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখি, যা শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলবে। জুলাই সনদ আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে আদায় করবো ইনশাল্লাহ। বর্তমানে জুলাই অভূত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রপাগান্ডা চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঝিনাইদহের সন্তান তারেক রেজা ঢাকায় প্রথম ছয় শহীদের জানাজা পড়িয়েছিলেন। আমরা তাঁকে ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নে কাজ করার জন্য আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। এনসিপি জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করবে এবং সর্বদা জনগণের পাশে থাকবে।’

পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা এক খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু শাসন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পায়নি দেশ। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হবে। আমরা এমন রাজনীতি চাই, যেখানে ধর্মের নামে কোনও হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।’

কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, ‘স্বৈরশাসক খুনি জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ বিবিসি পেয়েছে। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনও নির্বাচন হবে না। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য লড়াই শুরু করেছিলাম, যা আজ স্বৈরশাসকের পথন হয়েছে। সংস্কার না হলে লড়াই চলবে। আমরা ঝিনাইদহবাসীর দোয়া ও পরামর্শ চাই।’

দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তারা সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। আমরা বিচার ও সংস্কার করেই নির্বাচন চাই। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। নির্বাচিত হয়ে সংস্কার ও বিচার করার নিশ্চয়তা কোথায়? সংস্কার না হলে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসবে।’

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস, যিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার ও তাদের বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই। ছাত্রজনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে হত্যা হয়েছিল, যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

মুখ্য সমন্বয়ক নাসীর উদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছি, কিন্তু দীর্ঘদিন পরও হত্যার বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। আমরা সংস্কার চাই, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই। আমরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ভয় পাই না, জনতার ভালোবাসায় এগিয়ে যেতে চাই।’

পদযাত্রা ও পথসভায় অংশ নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা, ঝিনাইদহ জেলা আহ্বায়ক আবু হুরাইয়া, জেলা সদস্যসচিব শাহরিয়ার অভীক, সদর উপজেলা আহ্বায়ক সৌরভ আহমেদ শুভ, মহেশপুর উপজেলা আহ্বায়ক হামিদুর রহমান রানা, কোটচাদপুর উপজেলা আহ্বায়ক হৃদয় আহমেদসহ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

এর আগে বিকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ শহরের জোহান পার্কে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বিকেল ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানান। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ পথসভায় অংশ নেন।

সত্য প্রতিবেদন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ