রাজশাহীতে বাড়ছে শব্দদূষণ: ‘নীরব এলাকা’ এখন কেবল নামেই

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১০:১৩:৩১
রাজশাহীতে বাড়ছে শব্দদূষণ: ‘নীরব এলাকা’ এখন কেবল নামেই

সত্য নিউজ: রাজশাহী নগরের হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরি ঘেরা এলাকা—যা আইন অনুযায়ী ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত—তাও এখন হর্ন ও যানবাহনের শব্দে সরব হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের লাগামহীন শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সোমবার বেলা ১১টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে থেমে থাকা অসংখ্য গাড়ি থেকে অবিরাম হর্ন বাজছে। এমনকি হাসপাতালের ভেতরেও হর্ন বাজাতে দেখা যাচ্ছে অটোরিকশা চালকদের।

অঞ্চলটি শুধু হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ নয়—এখানে রয়েছে মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার, একটি উচ্চবিদ্যালয় এবং বহু বেসরকারি ক্লিনিক। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর বহু আগেই এলাকাটিকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, "গাড়িগুলো থেমেও হর্ন বাজায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অন্তত হাসপাতালের সামনের জায়গাটায় হর্ন বন্ধ করা উচিত।"

পরিবেশবিদ ও নগরবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও রাজশাহীতে এত শব্দদূষণ ছিল না। কিন্তু এখন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে অটোরিকশা, নির্মাণকাজ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাব ও জনসচেতনতার ঘাটতির কারণে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (UNEP) ২০২২ সালের ‘ফ্রন্টিয়ারস’ প্রতিবেদনে রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে দেখানো হয়, যেখানে শব্দের মাত্রা ১০৩ ডেসিবেল উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় সংস্থা বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা জানায়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মাত্রা গড়ে ৭ ডেসিবেল বেড়েছে।তালাইমারী মোড়, সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, রেলগেট—সবখানেই এখন যত্রতত্র থেমে থাকা গাড়ির হর্নে শব্দ মাত্রা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দমাত্রা ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেলের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এই মাত্রা ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, "অতিরিক্ত শব্দ শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর। এতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। এমনও ঘটনা রয়েছে, যেখানে হার্টের রোগী অতিরিক্ত শব্দের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।"

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ২৮টি অভিযান চালিয়ে ১২৪টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ ও প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা এবং শহরের যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

পাঠকের মতামত:

ট্যাগ: রাজশাহী

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ