ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: আকাশপথে সংঘাত, পরমাণু উত্তেজনা ও অনিশ্চিত শান্তি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০৭:৩৯:২৭
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: আকাশপথে সংঘাত, পরমাণু উত্তেজনা ও অনিশ্চিত শান্তি

সত্য নিউজ:ভারত ও পাকিস্তান আবারও যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে। কিন্তু এবারের সংঘাত ছিল অতীতের চেয়ে ভিন্ন ও বহুমাত্রিক। চার দিন ধরে চলা সংঘর্ষে উভয় দেশ ব্যবহার করেছে নতুন প্রজন্মের সামরিক প্রযুক্তি, যার মধ্যে ছিল অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান। সংঘাতের চরিত্র এবং গভীরতা দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থানকে করেছে আরও কঠোর, শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা অনেকটাই অনিশ্চিত করে তুলেছে।

আকাশপথে অভূতপূর্ব সংঘাত:

এই সংঘাতে প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ব্যাপকহারে অস্ত্রবাহী ড্রোন ব্যবহার হয়। শত শত ড্রোন একযোগে ব্যবহৃত হয় শত্রু প্রতিরক্ষা অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ ও লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে। সীমান্ত পেরিয়ে এই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের ও পাকিস্তানের অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আক্রমণ করে বিমানঘাঁটি ও অন্যান্য কৌশলগত স্থাপনায়।

সংঘর্ষের কূটনৈতিক মাত্রা:

যখন দুই পক্ষই সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতিতে পৌঁছেছিল, তখন শুরু হয় আন্তর্জাতিক কূটনীতির তৎপরতা। তবে এবারের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। বিশ্ব নেতৃত্বের অনাগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার ব্যর্থতা সংঘাত নিরসনে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে পারেনি। সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবনের মতে, অতীতে বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এবারের দৃশ্যপটে সে রকম সক্রিয়তা ছিল দুর্বল।

ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা:

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাব এবারের সংঘাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানে ইসলামীকরণের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী এখন কট্টর অবস্থানে। অন্যদিকে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার পাকিস্তান ইস্যুতে কোনো ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক বছরে পাকিস্তানকে ঘিরে একটি দ্বিমুখী কৌশল নিয়েছেন: একদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে একঘরে করা, অপরদিকে কাশ্মীরে সামরিকীকরণ জোরদার করা।

সন্ত্রাসবাদের ছুতোয় সামরিক প্রতিক্রিয়া:

২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করে। তবে এই ঘটনাই নতুন যুদ্ধপর্বের সূচনা করে। এর আগে ২০১৬ ও ২০১৯ সালে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে ভারত এক ধরনের আগ্রাসী প্রতিক্রিয়ার নীতি স্থাপন করেছিল। এবারের হামলার পরেও রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ সেই প্রতিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

পরমাণু আশঙ্কা ও কৌশলগত জটিলতা:

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, এবারের সংঘাত কৌশলগত স্তরে উন্নতি না ঘটিয়ে বরং বিপদ বাড়িয়েছে। উভয় দেশই তাদের সামরিক সক্ষমতা দেখাতে চেয়েছে, কিন্তু বাস্তব অর্জন অনিশ্চিত। সংঘাত যখন পরমাণু অস্ত্রধারী দুই রাষ্ট্রের কৌশলগত স্থাপনায় পৌঁছায়, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা:

যুদ্ধবিরতির পরও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো লক্ষণ নেই। ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়নি, সিন্ধু পানিচুক্তি রক্ষা নিয়েও ভারতের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা আসেনি। ইসলামাবাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছে, পানি আটকে দেওয়ার যেকোনো প্রয়াসকে তারা যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবে।

আপাতভাবে সংঘাত স্থগিত হলেও, আস্থা ও শান্তি ফেরানোর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় কূটনৈতিক উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, সামরিক প্রতিযোগিতা ও সীমান্তবর্তী উত্তেজনার বর্তমান বাস্তবতায়, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও হুমকির মুখে। যদি আস্থা পুনর্গঠন না হয়, তবে ভবিষ্যতের আরও ভয়াবহ সংঘর্ষ এড়ানো কঠিন হয়ে উঠবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ