ভাইয়ের শত্রুতার বলি এক নারী: শাহ পরানের পরিকল্পনায় চাঞ্চল্য

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৪ ১৩:৩০:৫৬
ভাইয়ের শত্রুতার বলি এক নারী: শাহ পরানের পরিকল্পনায় চাঞ্চল্য

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ‘ধর্ষণ’ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর নেপথ্যে চমকে দেওয়ার মতো এক প্রতিশোধপরায়ণতার কাহিনি সামনে এনেছে র‌্যাব। তদন্তে উঠে এসেছে, ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এক ব্যক্তি শাহ পরান তারই বড় ভাই ফজর আলীকে সামাজিকভাবে বিপদে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে ‘মব লিঞ্চিংয়ের’ মতো ঘটনা ঘটিয়ে তা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাহেরচর গ্রামের শহিদের দুই ছেলে বড় ভাই ফজর আলী ও ছোট ভাই শাহ পরান দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক বিরোধে লিপ্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে একটি গ্রাম্য সালিসে বড় ভাই জনসম্মুখে ছোট ভাইকে চড় মারেন। এর প্রতিশোধ নিতে শাহ পরান সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।”

সেই সুযোগ আসে ২৬ জুন রাতে। র‍্যাব জানায়, ফজর আলী ওই নারীর পরিবারের কাছে টাকা সুদে ধার দিয়েছিলেন। সেই পাওনার অজুহাতে তিনি ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন। এর ২০ মিনিট পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহ পরান ‘মব’ তৈরি করে ঘরে ঢুকে ওই নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, তাকে ও ফজর আলীকে মারধর করে, শ্লীলতাহানির পর ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেন।

এইচ এম সাজ্জাদ বলেন, “শাহ পরান এ ঘটনায় গ্রামের আরও কয়েকজন আবুল কালাম, আরিফ, অনিক, সুমন, রমজানসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে ‘ইমো’ অ্যাপে মেসেজ দিয়ে ডেকে আনেন। তারা একসঙ্গে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে নারীর ওপর চরম নির্যাতন চালায় এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাইকে ওই পরিস্থিতিতে জড়িত করার চেষ্টা করে।”

র‍্যাব জানায়, ঘটনার পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুরো ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।

র‍্যাব আরও জানায়, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ২৯ জুন মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ধর্ষণে অভিযুক্তসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই ঘটনা শুধু একটি নারীর প্রতি সহিংসতা নয়, এটি সামাজিক অবক্ষয়ের গভীর প্রতিচ্ছবি যেখানে ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাতে একজন নারীকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ‘উপকরণ’ বানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, পরিবারিক বিরোধ যখন বিচারহীনতা ও প্রতিশোধপরায়ণতায় রূপ নেয়, তখন তা নারী নিগ্রহের ভয়াবহ মোড় নিতে পারে।

র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, শাহ পরান তার ভাইকে সামাজিকভাবে হেয় করতে নারী নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য কৌশল গ্রহণ করেছেন, যা একদিকে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন, অন্যদিকে ভ্রাতৃত্বের চরম অবক্ষয়ের উদাহরণ।

এই ঘটনায় রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই করণীয় আছে একদিকে অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, অন্যদিকে এমন ঘৃণ্য সামাজিক কৌশল নির্মূলে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি অপব্যবহার রোধ এবং নারীর মর্যাদাকে আইনি ও সামাজিকভাবে সুরক্ষিত রাখা।

র‍্যাব জানিয়েছে, শাহ পরানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর মুরাদনগর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, ঘটনার পূর্ণ সত্য উদঘাটনে তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ব্যবহার করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ