শেয়ারবাজারে নতুন প্রেক্ষাপট: সংস্কার, স্থিতিশীলতা ও আস্থা ফেরানোর প্রক্রিয়া

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০০:৪১:৩৭
শেয়ারবাজারে নতুন প্রেক্ষাপট: সংস্কার, স্থিতিশীলতা ও আস্থা ফেরানোর প্রক্রিয়া

সত্য নিউজ: বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিশ্চয়তা, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে ভুগলেও সাম্প্রতিক কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনার সমন্বয় এই বাজারের সামনে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্য শুল্ক-সংক্রান্ত সমঝোতা এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের শেয়ারবাজার সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা—এই তিনটি বড় প্রেক্ষাপট মিলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদের সঞ্চার ঘটিয়েছে।

সর্বশেষ, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখযোগ্য পাঁচ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:

সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করা — যেগুলোর বাজারে আগমন পুঁজিবাজারের গভীরতা ও পরিধি বাড়াবে।

বড় এবং সম্ভাবনাময় দেশীয় কোম্পানিগুলোকে কর প্রণোদনা দিয়ে বাজারমুখী করা — যাতে তারা ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহে আগ্রহী হয়।

বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তায় তিন মাসের মধ্যে একটি কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়ন — যা বাজার পরিচালনার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াবে।

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ — বিনিয়োগকারীদের আস্থার পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে উৎসাহ প্রদান — যা পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করবে।

বৈঠকে আরও প্রস্তাব করা হয়, ইউনিলিভারের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে এবং বাজার আরও বলিষ্ঠ হবে। এজন্য অতীতে কার্যকর প্রমাণিত করপোরেট করহারে তালিকাভুক্ত ও অনালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ পার্থক্য পুনর্বহালের প্রস্তাবটিও আলোচনায় উঠে এসেছে।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব: শান্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাবাংলাদেশের শেয়ারবাজারে চলমান ইতিবাচক ধারা কেবল অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের ফল নয়, বরং এর পেছনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও ভূমিকা রাখছে। ভারত ও পাকিস্তান—দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র—সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের কূটনৈতিক অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে, যার ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পড়বে।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: স্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা নিরসনদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আপাতত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী, রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা কমে আসছে এবং বাজারে অনিশ্চয়তার জায়গায় স্থিরতা ফিরে আসছে।

বাজারে আস্থা ফেরানোর মুহূর্ত: একটি সম্ভাবনাময় সূচনাবাজার বিশ্লেষকদের মতে, যখন সরকার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সংস্কারে আন্তরিক হয় এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করে, তখনই শেয়ারবাজারে আস্থা তৈরি হয়। উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠক এবং বাস্তবভিত্তিক নির্দেশনাগুলো নিঃসন্দেহে পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিনের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

সব মিলিয়ে, সরকারের সময়োপযোগী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা মিলিয়ে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার একটি সম্ভাবনাময় মোড় ঘুরতে চলেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি নতুন আস্থার সূচনা হতে পারে, যার সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ