CNN-এর বিশ্লেষণ

ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব: ট্রাম্পের অবস্থান বদলে চাপে ইউরোপীয় ঐক্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৯:৩২:৪৮
ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব: ট্রাম্পের অবস্থান বদলে চাপে ইউরোপীয় ঐক্য

সত্য নিউজ: ইউক্রেনে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আশাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল এক অস্থায়ী পাশ্চাত্য ঐক্য। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনের ফলে সেই ঐক্য এখন চরম সংকটে। দুই মাস আগে ট্রাম্প প্রশাসন যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা সেটিকে বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে জোর দেন। কিয়েভে এক উচ্চপর্যায়ের সফরে ইউরোপের চারটি বড় সামরিক শক্তির নেতারা—জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইতালি—রাশিয়াকে এই প্রস্তাবে সম্মত হতে সোমবার পর্যন্ত সময় দেন। দাবি করা হয়, এই প্রচেষ্টার পেছনে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সমর্থন ছিল, এবং তিনি “ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা” আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।

এই কথোপকথনের একটি ছবি ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভ থেকে অনলাইনে প্রকাশও করেন। এমনকি ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলোগও এই দাবির পক্ষে সুর মেলান।

পুতিনের পাল্টা প্রস্তাব, ট্রাম্পের অবস্থানবদল

কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পুরোপুরি অবহেলা করেন যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ এবং পুরনো এক ধারণা নতুন আঙ্গিকে হাজির করেন—মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সরাসরি আলোচনা, যার স্থান হবে ইস্তানবুল এবং সময় হবে চারদিন পর। এই প্রস্তাবেই ট্রাম্প নতুন করে অবস্থান নেন। তিনি Truth Social-এ এক পোস্টে লেখেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি চান না এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিয়ে লেখেন: “HAVE THE MEETING, NOW!!!” এই আচমকা পরিবর্তনে পাশ্চাত্যের ঐক্যে চিড় ধরে। জেলেনস্কির কাঁধে পরে যায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভার—যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত একজন নেতার সঙ্গে সামনাসামনি আলোচনায় বসার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাঁকে।

অদৃশ্য কূটনীতি, দৃশ্যমান নীরবতা

CNN-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পর্দার আড়ালে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে কোনো সমঝোতা গড়ে উঠছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্পের আচরণে স্পষ্ট হয়েছে, তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের একসঙ্গে রাখার চেয়ে পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য ইউরোপীয় নেতারাও ট্রাম্পের পোস্টের পর নীরব হয়ে পড়েন। কিন্তু ইউক্রেনের আকাশ ছিল শান্ত নয়—রাশিয়া সেই রাতেই ১০৮টি ড্রোন হামলা চালায়, যার একটি খারসন অঞ্চলে এক দশবছর বয়সী শিশুকে ধ্বংসাবশেষের নিচে ফেলে দেয়।

ইউরোপের কৌশল ব্যর্থ, কিন্তু ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট

ইউরোপের এই প্রচেষ্টা মূলত রাশিয়ার “শান্তিতে অনিচ্ছা” ও ট্রাম্প প্রশাসনের আসল মনোভাব প্রকাশ করার এক রণকৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তারা একদিকে যেমন পুতিনের নির্লিপ্ততা দেখতে পেল, অন্যদিকে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়েও আর কোনো বিভ্রান্তি রইল না।

বর্তমানে পুতিনের জন্য তিনটি বড় সুবিধা স্পষ্ট:

প্রথমত, তিনি ইউরোপ ও ইউক্রেনের দাবি উপেক্ষা করেও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো পরিণতির মুখে পড়েননি; দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছিলেন, বা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছিলেন, তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি; তৃতীয়ত, পুরনো ইস্তানবুল আলোচনা প্রস্তাব এখন নতুন করে ট্রাম্পের মুল বক্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইস্তানবুল বৈঠক: প্রতিশ্রুতি না বিপদ?

আগামী বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত রাশিয়া-ইউক্রেন বৈঠক, যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে সেটি হবে প্রচুর উত্তেজনা ও রাজনৈতিক জটিলতায় ভরা। জেলেনস্কি ও পুতিন একে অপরের প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ পোষণ করেন—একজন পশ্চিমা-ঘেঁষা স্বাধীনতাকামী, অন্যজন একদা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী এমনকি বৈঠক হলেও তা অবিলম্বে শান্তি বয়ে আনবে না—বরং দেরি করতে পারে প্রকৃত সমাধানের পথ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঐদিন তুরস্কে অবস্থান করবেন, ট্রাম্পও ঐ অঞ্চলে থাকতে পারেন—যা ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকটিকে সরাসরি সহায়তা করতে পারে। কিন্তু এতে করে ইউক্রেন ও ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

পুতিনের সময় ক্ষেপণ, ট্রাম্পের দ্বিধা

CNN-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বারবার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়ক। এটি কেবল কূটনৈতিক কৌশল না, বরং ইউরোপীয় ঐক্যের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। পূর্ব ইউক্রেনের পক্রোভস্ক অঞ্চলে রাশিয়া আরও সেনা মোতায়েন করছে, শান্তির বদলে যুদ্ধের প্রস্তুতিই সেখানে জোরদার হচ্ছে।

ইউরোপ-ইউক্রেন এখন নির্ভর করছে নিজের শক্তির ওপর

যদিও ইস্তানবুল বৈঠক কিছুটা কূটনৈতিক অগ্রগতি আনতে পারে, বাস্তবিক অর্থে যুদ্ধ থামানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং এটি ইউরোপীয় মিত্রদের বুঝিয়ে দিয়েছে—ট্রাম্প যে সিদ্ধান্তে যাবেন, তা পুতিনের সম্পর্ক নষ্ট করার নয়। ফলে, ইউরোপের সামনে দুটি পথ: এককভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, অথবা কিয়েভে করা হুমকি ও প্রতিশ্রুতি গুলিকে অসার প্রমাণ করে পিছিয়ে পড়া। যুদ্ধের এই দোদুল্যমান অবস্থায়, ইউক্রেনের একমাত্র ভরসা এখন তার সাহস, প্রতিরোধ এবং সম্ভাব্য মিত্রদের সদিচ্ছা।

সূত্র: এই প্রতিবেদনটি CNN-এর একটি বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিবেদন অবলম্বনে প্রস্তুত।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ