মানুষ না এআই? ভবিষ্যতের কাজ ভাগাভাগির দার্শনিক প্রশ্ন

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৮:১১:৫১
মানুষ না এআই? ভবিষ্যতের কাজ ভাগাভাগির দার্শনিক প্রশ্ন

গত এক বছরে অনুষ্ঠিত অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও চিন্তাশীল আলোচনায় একটি প্রশ্ন ক্রমশ উত্থাপিত হয়েছে—মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কীভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে? প্রযুক্তির এই যুগে এই সহাবস্থানের ধারণা আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়—এটি এখন বাস্তব।

তবে প্রশ্নটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি একটি গভীর দার্শনিক জিজ্ঞাসা: কোন কাজটি মানুষের, আর কোনটি এআইয়ের? সহজ উত্তর নেই, তবে প্রতিনিয়ত নতুন অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবন আমাদের একটি যৌথ কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে এআই ও মানুষ পরিপূরক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

এআই—যুক্তিবদ্ধ, দক্ষ, অথচ অনুভূতিহীন

বিবিসি বলছে, “এআই এমনভাবে শেখে ও সমস্যার সমাধান করে যা মানুষের মতো মনে হয়। তবে এটি ভাবতে, সহানুভূতি প্রকাশ করতে বা নৈতিকভাবে যুক্তি করতে পারে না। বরং এটি বড় ডেটা বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত প্যাটার্ন অনুযায়ী কাজ করে।”

এই প্রসঙ্গে চীন-আমেরিকান গবেষক কিহুই শুর একটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্য: “একটা ভাষা‑মডেল গোলাপের গন্ধ নিতে পারে না, ডেইজির কোমল পাপড়িতে স্পর্শ করতে পারে না বা জঙ্গলের মধ্যে হাঁটার অনুভূতি বুঝতে পারে না। তাই ফুলের পূর্ণতা কখনও এআই বুঝতে পারবে না।”

‘ইমাজিনেশন ইন অ্যাকশন’ সম্মেলন: বাস্তব সহযোগিতার দৃষ্টান্ত

এই সহযোগিতার কাঠামো কেমন হতে পারে, তা উঠে এসেছে 'ইমাজিনেশন ইন অ্যাকশন' সম্মেলনের এক আলোচনায়, যেখানে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয়েছে—মানুষ ও এআই কীভাবে সমন্বয়ে কাজ করতে পারে:

১. তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে বিভাজন:

এআই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় তথ্য বিশ্লেষণ করে ইনসাইট দিতে পারে। মানুষ সেই তথ্য প্রাসঙ্গিক করে তোলে, অর্থবহ করে তোলে দর্শকের জন্য।

২. অগোছাল ডেটা সুশৃঙ্খল করা:

মাইক্রোসফটের সাউন্দররাজন শ্রিনিভাসন উল্লেখ করেন, সিইওর মিটিং নোট বা ইমেইলের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দ্রুত সনাক্ত করে সাজিয়ে দিতে পারে এআই। এটি সময় ও মানসিক পরিশ্রম দুটোই বাঁচায়।

৩. প্রাকৃতিক ভাষায় SQL অ্যাক্সেস:

এআই এমনকি SQL না জানা ব্যবহারকারীকেও সহজে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ করে দেয়। যেমন—"গত মাসে কোন প্রোডাক্ট বেশি বিক্রি হয়েছে?"—এই প্রশ্নের উত্তর বাক্যেই পাওয়া যায়।

৪. উপদেশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা:

ওয়ান ডিজিটালের সিনিয়র কর্মকর্তা বিনয় গিদহনি বলেন, “জেনারেটিভ এআই আমাদের ফিনান্স ও হেলথ উপদেশ দিতে সাহায্য করে, যা আমাদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখছে।”

৫. কোপাইলট হিসেবে এআই:

মাইক্রোসফট কোপাইলটের ধারণাটি স্পষ্ট করে—এটি মানুষকে প্রতিস্থাপন করে না, বরং তার দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়। এটি একধরনের শক্তিশালী পার্টনারশিপ।

৬. সেলস প্রস্তুতিতে সহায়ক:

এআই এখন সেলস প্রতিনিধিদের বৈঠকপূর্ব তথ্যসারাংশ তৈরি করে Slack-এ পাঠাতে পারে, যা Salesforce-এর মতো প্ল্যাটফর্মে বিশদভাবে ব্যবহৃত হয়।

মানুষ ও এআইয়ের কাজের পরিসর

এআই দক্ষ বিশ্লেষক, নির্দেশনা-ভিত্তিক এবং নিরপেক্ষ। এটি বিশাল ডেটা থেকে ট্রেন্ড বের করতে, সাজিয়ে দিতে এবং অপারেশনাল কাজগুলো অটোমেট করতে পারদর্শী।

অন্যদিকে মানুষই পারে সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক, সহানুভূতি এবং নৈতিকতা নিয়ে কাজ করতে। একজন মানুষ যখন বলে, “তুমি ডেটা সাজাও, আমি তা বাস্তবে প্রয়োগ করব”—তখনই প্রকৃত অর্থে মানুষ ও এআইয়ের সহযোগিতা শুরু হয়।

এই যুগের সবচেয়ে কার্যকর অংশীদারিত্ব হতে যাচ্ছে—এআইয়ের যুক্তিবোধ আর মানুষের অনুভূতির মিলন। এই সমন্বয়ই ভবিষ্যতের কাজের জগতে গড়ে তুলবে এক শক্তিশালী ও টেকসই কাঠামো।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত