গভীর তাৎপর্যে ভরপুর আশুরা—এর পেছনের কাহিনি কি আপনি জানেন?

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৫:০৮:৪০
গভীর তাৎপর্যে ভরপুর আশুরা—এর পেছনের কাহিনি কি আপনি জানেন?

ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম, যে মাসকে কোরআন ও হাদিসে ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তা শুধু একটি ক্যালেন্ডার শুরু নয়—বরং ইতিহাস, আত্মত্যাগ, এবং ইবাদতের এক বিশেষ সময়ও বটে। চারটি সম্মানিত মাসের (আল-অশহুরুল হুরুম) একটি হিসেবে মহররমকে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন।

সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন—

“নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস... এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোনো জুলুম করো না।”

এই আয়াতের তাফসিরে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুখারি শরিফে (হাদিস ৩১৯৭) বলেন, “জিলকদ, জিলহজ, মহররম—এ তিন মাস পরপর সম্মানিত এবং রজব মাস এককভাবে সম্মানিত মাস।”

কেন হারাম মাস?প্রাক-ইসলামি যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। হজে আগমন, হজ পালন এবং নিজ ভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য জিলকদ, জিলহজ ও মহররম মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হতো। ইসলামে এসে এই প্রথাকে রূপান্তরিত করা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মানিত সময় হিসেবে। রজবকে ওমরাহ পালনের জন্য নিরপদ সময় হিসেবে রাখা হয়। এভাবেই চারটি মাসকে ‘হারাম মাস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

মহররমের রোজা: রমজানের পর শ্রেষ্ঠ ইবাদতনবিজি (সা.) বলেন:

“রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।”(সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬২৬)

এই রোজা নফল হলেও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, বিশেষত মহররমের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এটি শুধু ইবাদত নয়, বরং ঐতিহাসিক তাৎপর্যে ভরপুর দিনও।

আশুরা: মুক্তির ইতিহাস ও নবিজিদের শিক্ষামহররমের ১০ তারিখ, যাকে আশুরা বলা হয়, সেই দিনেই আল্লাহ তাআলা নবি মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দেন। মদিনায় এসে যখন রাসুল (সা.) দেখলেন, ইহুদিরা এ দিন রোজা রাখে, তখন তিনি বলেন:

“আমি মুসার (আ.) চেয়েও বেশি তার অনুসারী।”(সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৫৪৮)

তিনি নিজেও রোজা রাখেন এবং সাহাবাদেরও রাখতে নির্দেশ দেন।

মহররমের আরও তাৎপর্যইসলামের ইতিহাসে এই মাস শুধু ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের নয়, বরং আশুরার দিনে কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত স্মরণেও শোক ও আত্মচিন্তার মাস। যদিও এ ঘটনাটি সরাসরি কোরআন বা হাদিসে উল্লেখিত নয়, তবুও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এটি এক বেদনাবিধুর স্মৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

মহররম মাসে আমাদের কর্তব্য শুধু রোজা রাখা নয়, বরং নিজেকে পাপ থেকে বিরত রাখা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও একান্ত জরুরি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত