আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তান বিধ্বস্ত, বাড়ছে প্রাণহানি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ২০:৪৮:৩৩
আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তান বিধ্বস্ত, বাড়ছে প্রাণহানি

পাকিস্তানে চলমান ভারি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩২ জনে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লাখো মানুষের জীবনযাত্রা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ছাদ ও দেয়াল ধসে শিশু ও বৃদ্ধসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

শনিবার (২৮ জুন) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, গত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আকস্মিক বন্যা ও ছাদধসে অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮ জনই শিশু। সোয়াত উপত্যকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে, পাঞ্জাব প্রদেশে বুধবার থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের। এখানেও মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়া। খাইবার পাখতুনখোয়ায় বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা অব্যাহত থাকতে পারে। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ভূমিধসেরও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মারাত্মকভাবে দেখা দিতে শুরু করেছে। পাকিস্তান তার অন্যতম উদাহরণ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠী ২৪ কোটিরও বেশি মানুষ চরম আবহাওয়ার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।

গত মাসেও পাকিস্তানে শক্তিশালী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ৩০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি, তীব্র শিলাবৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং হঠাৎ বন্যা একাধিকবার দেশটিকে অচল করে দিয়েছে। বহু কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে, নষ্ট হয়েছে শস্য ও অবকাঠামো।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জলবায়ুর চরমতার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে অধিকাংশ ঘরবাড়ি দুর্বল নির্মাণশৈলীর ফলে ভারি বৃষ্টিপাতে সহজেই ধসে পড়ছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০০-র বেশি মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন কোটি মানুষ। চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে সেই দুর্যোগের চিত্র তুলনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাণঘাতী দুর্যোগ আরও ঘনঘন ও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর একার পক্ষে জলবায়ু মোকাবিলা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বৈশ্বিক সংহতি, ক্ষতিপূরণ তহবিল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। জলবায়ু রূপান্তরের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ অর্থায়নের মাধ্যমে। পাশাপাশি, দেশীয় পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো দুর্যোগপীড়িত এলাকায় দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো, শিশু ও নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং নতুন করে স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ